"স্বহস্তে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু"। কথাটা আমরা সহজে বলে ফেলি, এর মর্মার্থ অনেক গভীর। স্বয়ং আল্লাহর বন্ধু হতে কে না চায়! আল্লাহু আকবর! রিক্সাওয়ালারা স্বহস্তে উপার্জনকারী, তাই তাদের রয়েছে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার সুযোগ। তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমাদের দেশে আমরা তাদের হতদরিদ্রের কাতারে রাখি। কিন্তু তাদের দিয়ে আমাদের অনেক মহান কাজ সাধন হয়, যা আমরা প্রায় প্রত্যক্ষ করি। এবারে মানুষের স্বৈরাচার পতনের আগে, এই রিক্সাওয়ালাদের ভূমিকা ছিল একেবারে দৃশ্যমান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে, তাদের উৎসর্গ দেখে একজন রিক্সাওয়ালার আবেগ সারা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার তাৎক্ষণিক স্যালিউট ও এর আবেগ এখনো চোখে ভাসে, কান্না এসে যায়। তাছাড়া ৫ই আগষ্ট এর আগে সমবেত হয়ে রিক্সাওয়ালাদের আন্দোলনও বড়ো ভূমিকা নিয়েছে। মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছে, যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে, শহীদ হয়েছে। তাছাড়া উত্তাল যুদ্ধ মূহুর্তে যুদ্ধের ময়দানে সমর্থন যোগানো কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই, যেখানে ছিল জীবনহানির ঝুঁকি। ছদ্মবেশী নয়, বরং সরাসরি এ যুদ্ধে তাদের যুক্ত হওয়া অনেকটা ঈমানী দায়িত্ব পালনের মত।
ড. আসিফ নজরুল, আপনি এদেশে উপদেষ্টা না হওয়ার আগ থেকে সকলের কাছে সুপরিচিত। মানুষ আপনাকে আজীবন বিবেকবান মনে করে। এমন মনে করার দায়ভার সবচেয়ে বেশি ও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ক্লাসে এসে আপনার গল্পে প্রায় ঠাঁই পেতো রিক্সাওয়ালার সাথে আপনার কথোপকথন ও তাদের গল্প। আপনি তাদেরকে খুব ভালোবাসার কথা বলতেন। আর শিক্ষার্থীদের বলতেন, "তোমরা সুযোগ পেলে রিক্সাওয়ালাদের সাথে গল্প করো, ওরা দেশের সব খবর রাখে, ওরা রাজনীতিও বুঝে, ওদের কাছে অনেক তথ্য থাকে ও পাওয়া যায়।"
সেদিন আমরা শুধু আপনার ইনস্ট্রাকশন নিয়েছি। কারণ আপনি শিক্ষার্থীদের সঠিক চিন্তায় মনোনিবেশে তাদের সাথে গল্পের তাগিদ দিয়েছেন। আপনি নিশ্চয় এ রিক্সাওয়ালাদের গল্প আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। আমি নিশ্চিত আপনার সান্নিদ্যে আসা রিক্সাওয়ালারা আপনার জন্যে দোয়া করেছেন, তাই আজ আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার আসনে আসীন। তাছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার ইচ্ছা ও দেশের স্বার্থে কাজ করার অভিপ্রায় আপনার এক ভিডিওতে দেখেছি। আল্লাহ সবটাই কবুল করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আপনার সমীপে আপনার ক্ষুদ্র ছাত্র হিসাবে আমার চাওয়া, এদেশের গরীব মানুষের জন্যে কাজ করুন। রিক্সাওয়ালারা আজ আপনার দিকে নিশ্চয়ই তাকিয়ে আছে, এদেশের সম্পদ; জলজ, স্থলজ এদেশের জন্যে ব্যবহার করুন। ১৭৫০/১৮০০ টাকায় ইলিশ কিনে খেতে পারবেনা এ রিক্সাওয়ালারা। শুধু রিক্সাওয়ালা কেনো ৭০% মানুষ এতো দামের মাছ কিনে খেতে পারবেনা। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখুন। এদেশের বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষেরা জীবনের শুরুতে রিক্সাওয়ালার চেয়েও কম বেতনে চাকুরী শুরু করে। যার স্টারটিং বেতন হয়তো ১২০০০/= বা ১৫০০০/= বা ১৮০০০/= টাকা।
যে রিক্সাওয়ালার গল্পে আমরা আপনার মুখে অনুপ্রাণিত হতাম, আজ তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কিছু করুন। তাদের অর্থনীতি চাঙা করুন। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আজ আপনি সুযোগ পেয়েছেন যে সুযোগ হজ্ব থেকে এসে সোস্যাল মিডিয়ায় বলেছেন। আমরা কাজ দেখতে চায়। যদি কাজ করতে বাধাগ্রস্থ হন, এমন আসন থেকে আগেভাগে সরে দাড়ান। কারণ আপনাকে মানুষ আপনার ন্যায়নীতির জন্যে অনেক ভালোবাসে। এমন আসনে না থাকলেও আপনি সুপরিচিত ও মানুষের মনের মনিকোঠায়। বরং সরকার পরিচালনায় আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখলে বাজারে কাটতি পড়বে ওই বইয়ের। তবে আমরা ভালোকিছুর আশায় থাকলাম আরো কিছুদিন।
সাজজাদুল ইসলাম রিপন (এডভোকেট: সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ।)