জনগণের সরকার জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। সদ্য প্রসূত বাংলাদেশ। মাতৃভূমি বাংলাদেশ, এখন অনেকটা ভঙ্গুর রাষ্ট্র। সবদিক থেকে চরম ঝুঁকি। আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কোনো দিক থেকে একদম স্বস্তিতে নেই এদেশ। উচ্ছেদ হওয়া বিগত সরকার, এদেশের রাষ্ট্রীয় তহবিল অনেকটা খালি করে, জাতিকে দিয়েছে বড়ো ঋণের বোঝা। সমীক্ষা দেখাচ্ছে ২০৬২ সাল নাগাদ এমন ঋণ শোধ হতে পারে। এতটা বিপর্যস্ত রাষ্ট্রের পূর্নগঠনের দায়িত্বে এলেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস। কাধে নিলেন গুরু দায়িত্ব।
তার সরকার এদেশের কোনো সাংবিধানিক সরকার নয়। কারণ বিগত সরকার বাংলাদেশে তার টেকসই রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে সংবিধান কে নিজের মত করে সাজিয়েছেন। পরিকল্পনা নিয়েছেন ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এসেছে নতুন সরকার। এ সরকারের দায়িত্ব অনেক। একদিকে সুশাসন, অন্যদিকে রাষ্ট্র সংস্কারের গুরু দায়িত্ব তার হাতে। বিষয়টা একেবারে মসৃণ নয়। বড়ই চ্যালেন্জিং, বড়ই কঠিন। সহযোগিতা দরকার সর্ব মহলের।
নবজাত সরকারের বয়স এখনো ১ মাস পার হয়নি। তাছাড়া প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট হাজারো বাধা পেরিয়ে চলছে এ রাষ্ট্র নামক গাড়িটির চাকা। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে শুরু হয়েছে, এ সরকারকে বিদায় দিয়ে নির্বাচণ দেয়ার তাড়া। কারো কারো মুখে ইতোমধ্যে উচ্চারিত হয়েছে, সরকার কতদিন থাকবে জনগণ জানতে চাই। কেন রে ভাই? এতো তাড়াতাড়ি ক্ষমতা পেয়ে কি করবেন? এ সরকারকে তো ১ মাস আগেও সবাই চেয়েছিলেন। এখন এতো দ্রুত সব কিছু পরিবর্তন চান কেনো?
আগে দেশটাকে কোমর ঠিক করে দাড়াতে দেন। কারো ষড়যন্ত্রে, প্ররোচনায় তারাহুরা করবেন না। কারণ আপনাকে কেউ কেউ উসকাবে। আপনি ক্ষমতায় থাকলে তারা ভালো খেলতে পারবে এ জন্য, আপনার জন্যে নয়। দেশের সাংবিধানিক সকল পোস্টগুলো এখনো ভালো মানুষের হাতে ন্যাস্ত হয়নি। তাছাড়া সব জায়গায় বিগত সরকারের সেট-আপ, দ্রুত নির্বাচনে আপনি ক্ষমতায় আসলেও বেশিদিন টিকবেন না। তাই সদ্য প্রয়াতদের ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে ধীরে ধীরে যান। পা পিছলে পড়বেন না।
এই সরকার দায়িত্ব পাবার পর অনেকগুলো বাধা এর মধ্যে দূর হয়েছে। প্রথমে ডাকাতের উৎপাত, ভারত থেকে বাঁধ খুলে ছেড়ে দেয়া পানি তথা বন্যা, এরপর প্রতিদিন ঢাকায় বিভিন্ন দাবীদাওয়া নিয়ে ঢাকার রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি। এতগুলো বিষয়ের মাঝে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্যে তড়িঘড়ি করেন, তাহলে হয়তো ভালো ফল পাবেন না। এ সরকারের অল্প দিনের মধ্যেও আপনারা কিছু কিছু সুফল পেয়েছেন। এক দলের নেত্রী আটক ছিল, তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আরেক দল নিষিদ্ধ ছিল, ধীরে ধীরে তার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিচ্ছে। আয়না ঘরের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। সর্বোপরি গণমানুষের মুক্তি। কাজ প্রতিদিনই হচ্ছে, কিন্তু নির্বাচণ নিয়ে তাড়াহুড়ো, আপনাদের বড়ই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সাবেকী'র ছেলের ২/১ টা বিবৃতিতে গলে যাবেন না। ওরা জানে বর্তমান সরকারের সাথে ভালো খেলতে পারবেনা। তাই বারবার দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে। কখনো বলছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে অনুরোধ করবে, যেন দ্রুত নির্বাচন দেয়। বর্তমান সরকার প্রধান বলছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যেদিন চাইবে, সেদিন বিদায় নিবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কখন এই সরকারকে বিদায় জানাবে। তবে সেই সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো করলে, বিপদ সদ্য প্রয়াত দলের চেয়ে নির্বাচিত সরকারের বেশি হতে পারে।
তাই এ সরকারকে কাজ করার সুযোগ দিন, তাদের স্বাধীনতা দিন। তারা এদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচণ উপহার দেয়ার জন্যে যেনো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচণ হাজারো সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারবে। কারো প্ররোচণায় তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি থেকে ফিরে আসুন। নিজের অনুকূলে খেলার সুষ্ঠু মাঠ তৈরি পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সরকারকে সর্বার্ত্বক সহায়তা করুন। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হউন, শুধু রাজনীতি নয়। কারণ রাজনীতির সাথে দেশপ্রেম না থাকলে দেশ বার বার তার গতি হারাবে।
লেখক: সাজজাদুল ইসলাম রিপন (এডভোকেট সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ। যোগাযোগঃ ০১৫৪০৫৬৫৯৭৯)