হরতাল: বৈধতা ও অবৈধতা

হরতাল করা কি জায়েজ?

প্রসঙ্গঃ হরতালঃ বৈধতা ও অবৈধতা।

"রাসূল (সাঃ) বলেছেন- ইমানের সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা"। (সহিহ মুসলিম)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা কেউ কেউ হরতাল অবৈধ বলে প্রচার করছেন। প্রাসঙ্গিক বিষয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না করে দু`একটা আম হাদিসের উপর ভিত্তি করে ঢালাওভাবে হরতাল হারাম ফতওয়া দেওয়া মূলত মজলুমদের উপর তৃতীয় পক্ষের পক্ষ থেকে আরেকটা জুলুম।

যেহেতু হরতাল-অবরোধের ব্যাপারে শরিয়তের স্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই তাই এমতাবস্থায় গবেষণার আশ্রয় নিতে হয়। আর গবেষণা বলে, যদি দুইটি ক্ষতিকর দিক একত্রিত হয় এবং যে কোনো একটা বেছে নিতেই হয় তখন কম ক্ষতিকর জিনিসটি বেছে নেওয়া শরিয়তের বিধান। এইজন্য বাহরুল উলুম আল্লামা ইদ্রিস আহমদ শিবনগরী রহ. বলেছেন, "দুইটা কাফের নির্বাচনে দাঁড়ালে‌ও কম ইসলাম বিদ্বেষীকে ভোট দেওয়া ওয়াজিব। কেননা ইসলামের বেশি ক্ষতি হ‌ওয়ার চেয়ে কম ক্ষতি হ‌ওয়া মন্দের ভালো।"

এখানেও দু`দিকে ক্ষতি রয়েছে। এক, হরতাল করলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে, জনগণের কষ্ট হয়, দেশের সম্পদ নষ্ট হয়।

দুই, বর্তমান দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। জানমালের নিরাপত্তা নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে দিনদিন মানুষ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দে‌শে স্বৈরাচারী শাসন চলছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ঈমান আমল নিয়ে বেঁচে থাকা দুর্বোধ্য হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে ধরে ধরে নিয়ে মানুষ খুন করা হচ্ছে। রাস্তা প‌থে মানুষ গুপ্ত হত‌্যার শিকার হ‌চ্ছে। কিন্তু আইন কানুন, বিচার আদালত সবই এক পকেটে চলে গেছে। চার‌দিক থে‌কে শাসক শ্রেণীর নৈরাজ্যে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। গোটা দেশ একটা জেলখানায় পরিণত হয়েছে। 

এখন বলুন, এসব ক্ষতি বেশি মারাত্মক নাকি হরতালের ক্ষতি? হরতাল অবরোধের কারণে দেশের ও জনগণের যে ক্ষতি হয়ে থাকে এবং সাধারণ মানুষের যে পরিমাণ কষ্ট হয় তা থেকে হাজার হাজার গুণ বেশি কষ্ট মানুষ এমনিতেই এই রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত ভোগ করে চলেছে। 

বৃহৎ ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এবং দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হরতাল ও অবরোধ পালন করার মাধ্যমে সাময়িক ক্ষতি হাসি মুখে মেনে নেওয়া‌ও ঈমানী দাবি।

রাসুল সা. খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করেছিলেন। এই পরিখা খননে কি মদিনার মানুষদের কষ্ট হয়নি? রাসুলুল্লাহ সা. ও তার সাহাবাদের আমলে এমন কোনো যুদ্ধ ও আন্দোলন হয়েছে যেটাতে একটু হলেও শিশু ও নারীরা কষ্টের মুখে পড়েনি? 

তারা কি সাময়িক ক্ষতি ও কষ্ট মেনে নেননি? হাঁ, মেনে নিয়েছেন। কারণ দুনিয়াবী ক্ষতি থেকে দীন ও আখিরাতের ক্ষতি অনেক মারাত্মক। 

তাহলে আমরা কেনো পা‌রিপার্শ্বিক বিষয়গুলো চিন্তা না করে শুধু ফতওয়া দিয়ে জালিমকে সহযোগিতা করি? এটাই কি শরীয়ত?

কিন্তু হরতাল-অবরোধে দোকানপাট ভাংচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ক্ষতিকর কিছু করা যাবে না, এইগুলো মারাত্মক হারাম। আর কোনো ইসলামি দলের দা‌য়িত্বশীল নেতাই আগ্রাসন নীতির নির্দেশ দেয় না বরং কোনো অঘটন না ঘটানোর জন্য দায়িত্বশীলদেরকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেয়। তবুও প‌ক্ষে বি‌পক্ষের লোক‌দের সা‌থে আইন শৃঙ্খলা বা‌হিনীর সংঘ‌র্ষে নানা অঘটন ঘ‌টে যায় এবং কিছু উৎসাহী এমন বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ে তাই ব‌লে এই কার‌ণে গোটা হরতালের বিরুদ্ধে ফতওয়া জারি করা অন্যায়, অযৌক্তিক এবং শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক।

লেখক- শায়খ আসলাম হোসাইন,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম