সরকার একটা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের নিদর্শন। মানে একটা রাষ্ট্র পরিপূর্ণতা পেতে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট সরকার থাকা বান্ঞনীয় (মন্টিভিডিও কনভেনশন)। তাই প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এ সরকার গঠনের ফর্মূলা একটা দেশের সংবিধানে সাধারণত বলা থাকে। সরকারের মেয়াদ বা সময়কালও দেয়া থাকে সংবিধানে। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের মেয়াদান্তে নির্বাচনই একমাত্র নতুন সরকার পাবার মাধ্যম। অন্য কোনো উপায়ে নয়। তাই গনতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন আসলে জনগন একটু নড়েচড়ে বসে। কারন এ সময়টা তাদের মনের কথা / মেনডেট বলার উত্তম সময়। আবার সরকারে থাকা সরকারি দলের জবাবদিহিতারও এটা মোক্ষম সময় বলে বিবেচিত।
অপরদিকে অনির্বাচিত সরকার হলো যারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত নয়, এমন সরকারকে বুঝায়। গনতান্ত্রিক দেশে সাধারণত এর অস্তিত্ব নেই। কারন এমন দেশে জনগন সকল ক্ষমতার উৎস বলে বিবেচিত। আমাদের দেশেও তাই। (অনুচ্ছেদ ৭, সংবিধান)। কিন্তু বাস্তবতা হলো এদেশে এরশাদ সরকারের পতন পরবর্তীতে কয়েকটা নির্বাচন কালীন সরকারই ছিল অনির্বাচিত সরকার। তাই আমাদের মত গনতান্ত্রিক দেশে ইতোমধ্যে এই অনির্বাচিত সরকারের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এটা মূলত অস্তিত্বে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও স্বচ্ছতার অনুপস্থিতির কারণে যা দেশের সাধারণ জনগনের কাছেও অনেকটা যৌক্তিক বলে ইতোমধ্যে বিবেচিত হয়েছে।
সংবিধান একটি মানুষের তৈরি আইন। এ আইনের সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন,পরিমার্জন সম্ভব। দেশ ও জনগনের স্বার্থে এ দেশের ক্রান্তিকালে এ সংবিধান সংশোধন হয়েছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধীদলের আন্দোলন ও জনগনের দাবির মুখে তদানীন্তন সরকার বাধ্য হয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে অনির্বাচিত ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। কারণ নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন স্বাধীন, স্বচ্ছ হবার বিষয়ে অধিকতর সন্দেহ রয়ে যায় এবং নির্বাচন নিজেদের অনুকূলে নিতে সমস্ত রাষ্ট্রীয় সেটআপ দিতে দারুণ সুযোগ অবারিত থাকে। এমনি মুহুর্তে সে সময়ের সরকার জনগনের দাবির কাছে মাথানত করে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন আজও। কারণ জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।
লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।