আল্লামা সাঈদী রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা (পর্ব:০১)

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জীবনী

১৯৭৪ সন, দেশ জুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের তান্ডব চলছে। ধর্মনিরপেক্ষ সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে আল্লামা সাঈদীকে গ্রেফতার করে তাঁর কন্ঠ স্তব্ধ করবে, অপরদিকে নাস্তিকরা সুযোগ খুঁজছে তাঁকে হত্যা করার। চারদিকে নাগিনরাও বিষ নিঃশ্বাস ফেলছে - আল্লামা সাঈদী তা অনুভব করছেন। যে কোনো সময় তাকে হত্যা করা হতে পারে, এটা তাঁর অজানা নয়।

চরম এই পরিবেশে পাবনা শহরের অদূরে পুষ্পপাড়া আলিয়া মাদরাসায় তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা হলো৷ সেখানে প্রধান অথিতি থাকবেন  আল্লামা সাঈদী রহ.। 

একদিকে মহান আল্লাহর কুরআন প্রেমিক বান্দারা তাফসিরের আয়োজন করছেন, অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘাতকদের দল আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করার ঘৃণ্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ।

যথা সময় তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হলো। অগণিত মানুষের ঢল নামলো তাফসির মাহফিলে। সিন্ধান্ত হলো, মাহফিল শেষ করে আল্লামা সাঈদী পাবনা শহরে চলে যাবেন এবং সেখানে রাত যাপন করবেন। কিন্তু মাহফিল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি আহার এখানে করলেন এবং মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিসের কক্ষে আহারে বসলেন৷ তাঁর সাথে মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস নুরুল্লাহ সাহেবসহ আরো অনেকেই রয়েছেন। কিছু লোক গেলেন গাড়ি আনতে। গাড়ি আসলেই তিনি পাবনা শহরের দিকে রওয়ানা দিবেন।

আহার শেষ হতেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। চারদিকে নিকষ অন্ধকার নেমে এলো। ইতিমধ্যেই আল্লামা সাঈদীকে জানানো হলো গাড়ি এসে গেছে। তিনি অন্ধকারেই অনুমানে দরজার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন আর ধর্মহীন ঘাতকদের দল তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দরজার কাছে এগিয়ে আসছে। চারদিকে গাঢ় অন্ধকার৷ নিজের শরীর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। আল্লামা সাঈদী অনুভব করলেন, কয়েকজন লোক তাঁকে ধাক্কা দিয়েই দরজার দিকে এগুচ্ছে। তারপর অনুভব করলেন, তাঁর পাশ থেকেই গুলি ছোড়া হচ্ছে। তিনি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠলেন এবং পাবনায় চলে গেলেন।

পূর্ব থেকেই ঘাতকদের দল লক্ষ্য করছিলো যে, আল্লামা সাঈদী কোথায় বসে আহার করছেন এবং সেদিকেই তারা মারণাস্ত্রের লক্ষ্য স্থির করছিল। আল্লামা সাঈদী যে স্থানে বসে আহার করেছিলেন তার পাশেই ছিলেন মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল্লাহ সাহেব। ঘাতকদের ছুড়ে দেওয়া এক ঝাঁক তপ্ত বুলেট গিয়ে তাঁকে ঝাঁঝরা করে ফেলল। ঘটনা স্থলেই শাহাদাত বরণ করলেন তিনি।

ওদিকে সারা পাবনা শহরে  সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো যে, আল্লামা সাঈদী আর নেই। পাবনা শহরে যেন কারবালার মাতম শুরু হলো। নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবাই রাস্তায় নেমে এলো। উহুদের ময়দানে আল্লাহর রাসুল নিহত হয়েছেন, কাফিরদের ছড়িয়ে দেওয়া এই মিথ্যা সংবাদে মদীনায় যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটলো পাবনা শহরে। সারা শহর স্থবির অচল হয়ে গেল। অগণিত মানুষ যেন ক্রোধে ফেটে পড়তে চাইছে।

মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য সচেতন মহল মাইকের মাধ্যমে সারা শহরে জানিয়ে দিলেন যে, আল্লামা সাঈদী জীবিত আছেন এবং ভালোই আছেন। মাইকে ঘোষকের মুখ থেকে এই শুভ সংবাদ জানার পর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হলো। মহান আল্লাহ তাঁর কুরআনের এই খাদেমকে এভাবেই সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।


লেখক- শায়খ আসলাম হোসাইন,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন



1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম