আল্লামা সাঈদী রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা! (পর্ব:০৩)

আল্লামা সাঈদী রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা! (পর্ব:০৩)

১৯৭১ সনের পরে দেশের মানুষ যখন ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছিল, তখন একটা কন্ঠ খুব সোচ্চার ছিল- আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তাই তাঁকে হত্যা করার জঘন্য ষড়যন্ত্র করা হলো। ইসলামের দুষমনেরা এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য চাঁপাই নবাবগঞ্জের মাটিকে বেছে নিলো। তারা সেখানে একটি কলেজের প্রিন্সিপালের মাধ্যমে আল্লামা সাঈদীকে তাফসিরের দাওয়াত দিলো। কুরআনে সৈনিক আল্লামা সাঈদী সহজ সরল মনে তাদের দাওয়াত কবুল করে মরহুম বখস খানকে সাথে নিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে চাঁপাই নবাবগঞ্জের তাফসির মাহফিলে উপস্থিত হলেন।

অগণিত জনতা আল্লামা সাঈদীর কন্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসির শুনলেন। মাহফিল শেষে বিশ্বাস ঘাতকদের দল তাঁকে থাকতে দিল সদ্য নির্মিত একটি নির্জন বাড়িতে। যে বাড়িটির কোনো একটি রুমেও তখন পর্যন্ত দরজা জানালা লাগানো হয়নি। আল্লামা সাঈদী অপেক্ষা করছেন, তাঁকে আহারের ব্যবস্থা করবেন, আহার করে তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন। রাত ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে গেল। আহারের ব্যবস্থা তো দূরের কথা, দাওয়াত দাতাগণ তাঁর সাথে সৌজন্যতা প্রদর্শন করতে এলো না। মোনাফিকরা তখন আল্লামা সাঈদীর উপর হামলা করে তাঁকে হত্যা করার যাবতীয় ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। তাদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা মহান আল্লাহ তায়ালার অদৃশ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কতিপয় ঈমানদারের দৃ‌ষ্টি‌গোচর হলো। তাঁরা দ্রুত এসে আল্লামা সাঈদীকে বিশ্বাস ঘাতকদের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দিলেন।

নেই মৃত্যু ভয় আর নৈরাশ্যের কোনো চিহ্ন আল্লাহর সৈনিক আল্লামা সাঈদীর সদাহাস্যোজ্জ্বল চেহারায়। আল্লার সিদ্ধান্তের প্রতি রয়েছে তাঁর অটল বিশ্বাস। আগত ঈমানদারগণ বারবার অনুরোধ করেছেন আল্লামা সাঈদীকে আত্মগোপন করার জন্য। কিন্তু তিনি তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। অবশেষে তারা এক প্রকার জোর করেই তাঁকে সেই বাড়ি থেকে সরিয়ে নিলেন। তারা বললেন আপনার অবস্থানস্থলে আমরা থাকবো। বিশ্বাস ঘাতকদের দল আপনাকে না পেয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করবে কিন্তু এতে আমাদের কোনো আফসোস নেই। বর্তমান সমাজে আপনার মতো কুরআনের সৈনিকের বড় প্রয়োজন। আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন।

বিশ্বনবীর জীবনে হিজরতকালীন যে ঘটনা ঘটেছিলো, চাঁপাই নবাবগঞ্জের মাটিতে সেটার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটলো। রাসুলকে হত্যা করার জন্য কাফিররা যখন তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিলো। আল্লাহর নির্দেশে নবী করীম সা. হজরত আলী রা. তাঁর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে বললেন। হজরত আলী জানতেন, কাফিররা রাসুলকে না পেয়ে তাকে হত্যা করতে পারে কিন্তু এই নির্মম পরিণতির কথা জেনেও তিনি আল্লাহর নবীর শয্যায় শয়ন করেছিলেন।

এরই নাম নেতার প্রতি মমতা, এর নামই নেতার নির্দেশ পালন। মাওলানা খোদা বখস রহ. জানতেন, আল্লামা সাঈদী হলেন বাংলার মুসলমানদের কান্ডারী। তিনি অনুভব করলেন, ইসলামের শত্ৰুদের দল এতক্ষণে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল। তারা হন্যে হ‌য়ে পাগলা কুকু/রের মতো আল্লামা সাঈদীকে খুঁজে ফিরছে।

সুতরাং এই পরিস্থিতিতে ইসলাম যে নির্দেশ দিয়েছে, সেই নির্দেশ বর্তমানে অনুসরণ করতে হবে। তিনি আল্লামা সাঈদীকে বাধ্য করলেন পোশাক পরিবর্তন করতে। মাথা থেকে টুপি ও শরীর থেকে জামা খুলে নিলেন। অবশিষ্ট রইলো গায়ে গেঞ্জি আর পরনে সাধারণ একটি লুঙ্গি।

আল্লাহর দ্বীনের এই সৈনিকের চিরপরিচিত চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেলে। এ অবস্থায় তাঁকে এখন দেখলে কেউ চিনতে পারবে না। গভীর রাত- চারদিকে অন্ধকার থমথম করছে । মাথার উপরে তারা ঝলম‌লে আকাশ ৷ শ্বাপদ শংকুল অপরিচিত পায়ে চলা সংকীর্ণ মেটো পথ। আল্লাহর দ্বীনের দুই মুজা/হিদ অজানার উদ্দেশ্যে ক্ষুধার্ত পেটে এগিয়ে যাচ্ছেন। অনাহারক্লিষ্ট ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ পা আর সামনের দিকে অগ্রসর হতে চায় না।পেছনে বিশ্বাসঘাতক হায়েনার দল তাদেরকে অনুসন্ধান করছে- চোখে তাদের রক্তের ঘৃণ্য নেশা।

ক্লান্ত পা দুটোকে তাঁরা টেনে টেনে সামনের অপরিচিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কঠিন ঢিলা আর কাঁটার আঘাত পা দুটো ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। গোটা রাত তাঁরা চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে অপরিচিত এক পল্লীতে এসে যখন উপনিত হলেন- পূর্ব গগনে তখন পূর্বাশার স্পষ্ট ইশারা। সবুজ বনানী‌তে ঘেরা নিভৃত সেই পল্লীর এক বাড়ির কর্তার কাছে মাওলানা খোদা বখস আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। মহান আল্লাহ সেখানে তাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেন।

আল্লাহ তায়ালা সেদিন এভাবেই তাঁর কুরআনের সৈনিক আল্লামা সাঈদী রহ. কে হেফাজত করেছিলেন। আর ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন বাম-রামপন্থী নাস্তিক- মুরতাদ আর কমিউনিস্টদের সেই জঘন্য ষড়যন্ত্র।

আরও পড়ুনঃ 

আল্লামা সাঈদী রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা! (পর্ব:০১) 

আল্লামা সাঈদী রহ.-এর জীবনে ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা! (পর্ব:০২)

লেখক- শায়খ আসলাম হোসাইন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম