বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও বিশ্ববরেন্য ইসলামী চিন্তাবিদ, কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ মহান রাব্বি কারিমের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার সফর শেষ করে ১৪ আগষ্ট রাত সাড়ে ৮.৪০ টার দিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…।
আর তাকে মাদ্রাসা ময়দানে স্হাপিত বিশেষ আদালতে হাজির হওয়ার জন্য আসতে হবেনা। মা-সন্তান ও ভাই হারানোর ব্যথা বুকে ধারন করে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি কারাজীবনকে হাসিমুখে বরন করে নিয়েছিলেন।
মিথ্যা অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে তিনি বলেছিলেন এই বিচার শেষ বিচার নয়। শেষ বিচারের দিন বিচারকের আসনে থাকবেন আল্লাহ, আমি হবো ফরিয়াদী আর আসামী হবে আজকের বিচারক-স্বাক্ষী-তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিন আমি ন্যায় বিচার পাবো। আল্লামা সাঈদী শেষ বিচারের দিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন।
মামলার বিচার চলাকালে বারবার বলেছেন আমি নির্দোষ। আল্লাহর কসম আমি কোন অপরাধ করিনি। তাকে অপরাধী বানিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন আল্লাহ যদি আমাকে সম্মানিত করতে চান আমি তার জন্য প্রস্তুত।তিনি তার আইনজীবীদের লক্ষ্য করে বলেছেন: “ আমরা একসাথে জান্নাতে থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
আল্লামা সাঈদী অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় যাবৎ কুরআনের খিদমত করেছেন।বিশ্বের একপ্রান্ত খেকে অন্য প্রান্তে তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন মহাগ্রন্থ আলকুরআনের তাফসীরের জন্য।তার তাফসির শুনে বহু অমুসলিম ইসলাম গ্রহন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে তিনি কুরআনের মাহফিল করে মানুষের কাছে আল্লাহর বানী পৌছে দিয়েছেন । বাংলাদেশে ইসলামী জাগরন সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার অবদান স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
তিনি তার যৌবন কাটিয়েছে কুরআনের তাফসীরের ময়দানে শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন কারাগারে।কারাগারের লোহ কপাটে আবদ্ধ থেকে তিনি বিচলিত হন নি। মন ভাংগা হন নি।মুক্ত সাঈদীর চেয়ে বন্দী সাঈদী অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেন। মৃত্যকে আলিংগন করে তিনি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন এই মহান দাঈ। সরকারের জুলুম নির্যাতন তাকে আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করতে পারে নি।মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে তার উপর চরম অন্যায় করা হয়েছে।তাঁর মৃত্যু বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।তার এ শূন্যস্হান সহজে পূরন হবার নয়।
তার তাফসীর, বক্তব্য, আলোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌছে যাবে । তা চালু থাকবে বহুকাল।কোটি কোটি যুবক ও অগনিত মানুষ তার অসমাপ্ত কাজ আন্জাম দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসবে।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁর সকল খেদমত কবুল করুন।তাঁকে ক্ষমা করুন, তাঁর ওপর রহম করুন এবং তাঁকে সম্মানিত করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মাকাম দান করুন।আল্লাহ পাক তার এ মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে কবুল করুন। আমীন॥
লেখক- মোঃ মতিউর রহমান আকন্দ
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।