প্রকৃতির নিয়মে ফিরে যাওয়াই হবে তীব্র উত্তাপের একমাত্র সমাধান

প্রকৃিতর নিয়মে ফিরে যাওয়াই হবে তীব্র উত্তাপের একমাত্র সমাধান

প্রকৃতি নির্ভর জীববৈচিত্র যেন আজকাল প্রকৃতির চোখ রাঙ্গানোতে একেবারে অসহায়। সামান্য এইটুকুও যেন আজ সহ্যের বাহিরে। প্রকৃতি থেকে বের হয়ে কৃত্রিমায়োজনে কতটুকু স্বস্তিতে আজ এ জীবজগত? বরং মানুষ আজ বড়ো বিপদগামী, কারন প্রকৃতির সাথে অবিচার হলে, প্রকৃতি নিজেই তা কখনো ক্ষমা করেনা। আজ বৈশ্বিক উষ্ণতার করাল ছোবলে বাংলাদেশের মানুষ। অবস্থা এমন যে ঘরে-বাহিরে আগুনের চরম উত্তাপ। এর উপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন একপ্রকার বিপযস্থ্য। কৃত্রিম শীততাপেও যেন পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিচ্ছে না। প্রকৃতির নিয়মের ফিরে যাওয়াই হবে এই তীব্র উত্তাপের একমাত্র সমাধান। তাই বাস্তুসংস্থান বা biodiversity এর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। 

আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগেও এদেশের জলবায়ু এমন ছিল না, ছিল না এমন নিয়ন্ত্রনহীন গরম। গরমের এই গরমিল হিসাবের জন্যে মূলত আমরাই দায়ী। কারন গরম যেসব কারণে বেড়ে যাবে, তার অন্যতম হলো গাছ কেটে উজাড় করা। সবুজ বৃক্ষের পরিমান কমে যাওয়া।  আবার গরম থেকে মুক্তির কৃত্রিম উপায় এসির ব্যবহারও নির্দিষ্ট রুমের বাহিরের আবহাওয়াকে আরো গরম করে তোলে। এসি, ফ্রিজের নির্গত সিএফসি ক্রমান্বয়ে ওজোন স্তর ক্ষয়ের অন্যতম কারন যা বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর করে তোলে। এছাড়া গাড়ি ব্যবহারে নির্গত ধোঁয়া কার্বন-মনো-অক্সাইড এ গরম বৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ বলে বিবেচিত। আবাসস্থল নির্মানে বহুল ইট, বালি, সিমেন্ট ব্যবহারও কিছুটা পরিবেশকে উষ্ণ করে তোলে।


এবারের অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে ইতোমধ্যে মানুষ এসি কেনার হিড়িক শুরু করে দিয়েছে। যা আরো ভয়াবহ গরমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। অবস্থা এমন যে মনে হয়, আর কিছুদিন পর মানুষ ভাত খাবার জন্যে চাল না কিনে এসি কিনবে। এভাবে এসি ব্যবহার এতটা স্বাভাবিক হবে যে, এটা সচ্ছল মানুষের শুধু হবেনা, বরং সাধারণ মানুষও এমন জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়বে অচিরেই। কিন্তু এ উষ্ণতা কমানোর জন্যে এসি ব্যবহার কোনো টিকসই সমাধান নয়। বরং গরমের পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাবে বহুগুনে। তাছাড়া গরম বৃদ্ধির আনুপাতিক হার উত্তরোত্তর প্রতি বছর এমন মাত্রাই যাবে যে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে।


তাই  TAKE BACK NATURE।  প্রকৃতিতে ফিরে যাও। প্রকৃতির আপন ডাকে সাড়া দাও। এ স্লোগান হোক এ সময়ের প্রতিপাদ্য। কারন এ দেশের মাটি উর্বর। এ মাটিতে শস্যের সাথে সাথে চারাগাছ রোপন করলে বড়ো বড়ো গাছ হয়। প্রচুর গাছ রোপণ হতে পারে এ গরম থেকে পরিত্রাণ পাবার প্রাকৃতিক ও টিকসই উপায়। একটা দেশের পরিবেশ ভারসাম্যের জন্যে তার ভূমির নির্দিষ্ট পরিমান সবুজ বনায়ন প্রয়োজন। ক্রমশ গাছ-পালা কেটে বাড়ি নির্মান সহ আধুনিক স্থাপনার তথা উন্নয়নের কারনে আজ আবহাওয়ার বৈরী প্রভাবে মানুষ অতিষ্ঠ। দেশে প্রচুর গাছ-পালা বৃদ্ধিতে সরকার নতুন নতুন কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। ব্যক্তি মালিকানায় হলেও বৃক্ষ নিধনকে নিরুৎসাহিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা দরকার। আর উৎসাহ যোগানো উচিত বেশি বেশি করে গাছ রোপনে।


পাশাপাশি এ দেশের শহরগুলোতে গাছ লাগানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সরকারের হাতে নেয়া উচিত। কারন গ্রামের চেয়ে শহরের গরমের তীবর বেশি ও অসহনীয়। রাস্তার মাঝে আইল্যান্ড ও এর উভয় ধারে গাছ লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া ইন্জিন চালিত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও এখন সময়ের দাবী। সাইকেল বা প্যাডেলে চালিত রিক্সা বা তদ্রূপ বাহনকে শহরের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য ব্যবস্থাকরন সহ যানবাহনের ধোয়া যাতে শহরকে উষ্ণতার দিকে নিয়ে না যায়, সেদিকে নজর জরুরি। এ ছাড়া দেশের জলাশয়গুলো সংরক্ষণ ও পাহাড়ের কেটে সমভূমির পরিমান বৃদ্ধি না করনে সরকারি পদক্ষেপ জরুরি। কারন প্রকৃতিতে প্রানীকূলের জীবন যাপনের প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে উত্তম মডেল।


লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন

এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম