‘শিশু স্বাস্থ্যের অন্যপ্রান্তে’ -এডভোকেট সাজজাদুল ইসলাম রিপন

baby-health-care

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এটা যেমনি প্রবাদ, স্লোগান, তেমনি মহা সত্য। এ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে রয়েছে খাবার গ্রহনের অনন্য গুরুত্ব। অভিভাবকগন চান তার সন্তানরা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। কিন্তু খাদ্য দ্রব্যের হাজারো ভেজালে এটা কতটা সম্ভব? এটা খুবই আতংকের বিষয় যে বর্তমানে শিশুরা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুসের মত গুরুত্বপূর্ন শরীরের অঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যাচ্ছে শিশুদের। আর এর পুরো দায় ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশনের অপারগতায়।

‘জীবনের অধিকার’ যেমনি মানুষের ধর্মীয় অধিকার, তেমনিভাবে এটা বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার হরণে ভেজাল খাবার আজকাল অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু ভেজাল খাবার ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেও, এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের অপ্রতুলতা রয়েছে। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে নিশ্চয়ই একজন অভিভাবক আপ্রাণ চেষ্টা করেন তার সন্তানকে ভালো ভালো ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশনে। কিন্তু এতে কতটুকু সফল হন তিনি? কারন পারিবারিক সময়ের পরও একজন শিশুকে বাসার বাহিরে থাকতে হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে। স্কুলে যেতে হয় প্রতিদিন, যেখানে অভিভাবকের সরাসরি নজরদারি নাও থাকতে পারে।

ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের খাবারের ভালোমন্দ বুঝানো খুব সহজ নয়। তারা দৃষ্টিনন্দন, মুখরোচক খাবারে বেশি আকৃষ্ট। কেবল রসনা ফুর্তিতে তার ব্রেইন পজিটিভ সিগনাল দেয়। তাই শিশুদের খাবার গ্রহনে অভিভাবকদের মূখ্য ভূমিকায় থাকতে হয়, যিনি ইতিমধ্যে খাবারে ভালোমন্দ বুঝতে পারেন। এই সতর্কতা যত তারাতারি হবে ততই হাজারো শিশু বিপদমুক্ত থাকবে। ডাক্তাররা শিশু রোগী পেলে কমন এডভাইজ করেন যে বাহিরের খাবার দিবেন না। আসলে বাহিরের খাবারের ভয়ানক রুপ ডাক্তার বৈ আর কে বা জানে।

অন্যদিকে কোমলমতি শিশুদের স্কুলের সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নানা ধরনের বাহিরের খাবারের বহর। নিম্ন মানের আইসক্রিম, বেলপুরি, চটপটি, ফুচকা, চিপস, জুস সহ অনেক আয়োজন থাকে স্কুলের সামনে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার, ছোট ছোট বেবিরা এর গুনাগুন বিচার না করে দিব্যি খেয়ে চলছে। ফলে শিশু স্বাস্থ্যের দারুন অবনতি ঘটছে এ দেশে। ক্রমান্বয়ে এমন খাবার গ্রহনে শরীরে অতি অল্প বয়সে মারাত্মক সবরোগ বাসা বাঁধে। তাছাড়া আজকাল মানুষের মাঝে ফ্রাইড আইটেম খাবার প্রবনতা বেড়েছে। অতিরিক্ত ফ্রাইড আইটেম শরীরের জন্যে নিরবে অনেক ক্ষতি বয়ে আনে।

শিশুর সুস্বাস্থ্যে নিশ্চিতকরনে একপ্রান্তে রয়েছে অভিভাবকের দায়িত্ব, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তেমনি এমন স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যপ্রান্তে দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। তাই শিশুদের জন্যে তৈরি খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নিতে হবে। শুধু মুখরোচক খাবার পরিবেশনের চেয়ে খাবারের গুনগত মান মনিটরিং এ গঠন করতে হবে আলাদা সেল, যা ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে হবে। তাছাড়া ব্যবসায়িক চিন্তার চেয়ে যেসব খাবারের মান নেই, তার সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রস্তুত করন ও প্রচারণায়ও সরকারের দায়িত্ব রয়েছে।

অন্যদিকে স্কুল-কলেজের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্কুল কতৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। কারন একজন শিশুর দৈনিক একটা গুরুত্বপূর্ন সময় সে স্কুলে পার করে, যেখানে অভিভাবকদের সরাসরি নজরদারি থাকেনা। এছাড়া যেসব খাবারে শিশুদের পুষ্টি বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটাবে, সে বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার। কারণ শক্তিশালী প্রজন্ম গঠনে শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি অধিক যত্নবান হওয়ার এটাই উত্তম সময়। সর্বশেষ বলব, সুস্থ দেহে, সুস্থ মন, শিশু থাকুক সারাক্ষণ

লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন

এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম