একটি রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জনগনের আস্থা তৈরি করা। রাষ্ট্রীয় সত্তাকে জনগনের বিশ্বাসের জায়গায় রুপান্তর করা। কারন মানুষ মাত্রই স্বস্তি চাই যা আস্থার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমাদের দেশে মানব সম্পদের অভাব নেই, নেই শুধু দক্ষ মানব সম্পদকে আস্থায় নিয়ে আসার পরিবেশ। একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র, জনগনের আস্থা তৈরির মূল কারন। যে আস্থাহীনতা দেশের মানব সম্পদকে দেশে ধরে রাখতে পারেনা, সেই আস্থাহীনতাই একমাত্র দেশের আর্থিক সংকটের জন্যে দায়ী। ফলে পাচার হয় দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা। ধসে পড়ে দেশের অর্থনীতির দেয়াল।
আজ এ কথা সকলের মুখে মুখে যে, দেশে ডলার সংকট। একটি দেশের আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য, লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেকটা ডলার নির্ভর। ডলারকে বলা যায় কমন কারেন্সি। বর্তমানে এর বিকল্প নেই আন্তর্জাতিক বানিজ্যে। কিন্তু এ ডলারের সংকট আজ বাংলাদেশে। এ সংকটের প্রভাব পড়েছে আমদানি বানিজ্যে। তাই কাংখিত পরিমাণ পন্যদ্রব্য আমদানি না করতে পারার প্রভাব পড়ছে নিত্যপন্যের দামে। প্রতিনিয়ত দাম বেড়েই চলছে। অবস্থা এমন যে সবচেয়ে কম দামের তরকারী 'পেঁপে' এখন আশি টাকা কেজি দরে কিনতে হয়।
এ দেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারন হলো দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া। কানাডার বেগম পাড়া সহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী মানুষের সেকেন্ড হোম নামে তৈরি হওয়া অনেক নগর / পাড়া এ দেশের টাকা পাচারের মাধ্যমে হয়েছে। এ টাকা এদেশ থেকে টাকায় পাচার হয়নি, হয়েছে ডলারের মাধ্যমে। তাই ডলারের চাহিদা যোগান দিতে দেশের সকল ব্যাংক আজ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের তৈরি পন্য রপ্তানীতে যে ডলার আজ দেশে আসছে, তা দেশের স্বাভাবিক ডলার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া দেশের টাকার বিপরীতে এতো ডলার বিদেশে পাচার হওয়ায়, এদেশে এক ধরনের আর্থিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এ কথা এখন নির্ধিদায় বলা যায়, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে বসবাস করার মানসিকতা মানুষের মনের আস্থাহীনতা থেকে তৈরি হয়েছে। কারন এ দেশের শান্তিপূর্ন ভবিষ্যত জীবনে তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। পারেনি এ দেশে বিনিয়োগ করে দেশের টাকা দেশে রাখতে। এ কথা সত্য যে দেশের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা আসে মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে। অনেকের মনে এমন আশংকা জাগ্রত যে ক্ষমতার পট পরিবর্তন আমাদের অতীতের মত আর্থিক বিপন্নের কারন হতে পারে। তাই 'পাড়ি জমাও বিদেশে, তৈরি করো আবাসন'। আর এর পুরোটাই হয়েছে এ দেশের টাকা পাচার করে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এ ভূখণ্ডে আজ সবচেয়ে বেশি দরকার দেশের মানুষের মনে আস্থা তৈরি করা, এ ভূখণ্ডে সকলের জন্যে সবসময় শান্তির জায়গা, ভীতিহীন পরিবেশ তৈরি করা। কারণ ভীতিকর পরিবেশ মানুষ কে দুরে সরিয়ে দেয়। আর মানুষ দুরে সরে যেতে একা যায় না, সাথে টাকা, ডলার, সম্পদ নিয়ে চলে যায়। তাই সব বিতর্কের উর্ধ্বে ওঠে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে সাথে মানুষের মনে আস্থা তৈরি করা দরকার। দরকার সকলের জন্যে ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিতকরন। আর এমন আস্থা তৈরির মহান দায়িত্বে থাকে একটি দেশের সরকার ও তার পলিসি।
লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।