কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দান বাক্স প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয়। প্রতিবার এই মসজিদের দান বাক্সে যে পরিমান অর্থ জমা হয় তা হিসেব করতে রীতিমত ব্যাংকের কর্মকর্তারা পর্যন্ত চলে আসেন টাকা হিসেব করার মেশিন নিয়ে। ঘন্টা পর ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায় এসব টাকার হিসেব করতে। হিসেব শেষে যে পরিমান অর্থ ও সম্পদ পাওয়া যায় তা প্রতিবার কয়েক কোটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিবার দানের পরিমান হিসেবে পূর্বের রেকর্ডও ভেঙে যায়। প্রশ্ন হলো এই মসজিদে কেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এতো মানুষ অর্থ, কড়ি, গহনা ও সম্পদ দান করেন?
মানুষ যে সকল বিশ্বাস নিয়ে পাগলা মসজিদে দান করেন তা শরিয়তে কতটুকু গ্রহনযোগ্য? নাকি মানুষ যে বিশ্বাসে দান করেন তা শিরক? এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা নিজ ফেসবুক পেইজে লিখেছেন প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ সালাহউদ্দীন মাক্কী। দৈনিক লেখক পাঠকদের জন্য শায়েখের সে লেখাটি আমরা এখানে হুবহু তুলে ধরছি। ইনশাআল্লাহ।
শায়খ সালাহউদ্দীন মাক্কী লিখেছেন-
এবার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে প্রাপ্ত দানের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা !!
আমাদের কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে প্রতি ৩/৪ মাস অন্তর দান বাক্সে যত টাকা পাওয়া যায়, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমের দান বাক্সে এত টাকা হয়তো বছরেও জমা হয় না৷ পত্রিকায় দেখলাম বিধর্মীরাও সেখানকার দান বাক্সে টাকা রাখে৷
কোন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের বাসনা পূরণের আশায় আল্লাহর ঘরে দান করাতে শারয়ী নিষেধাজ্ঞা নাই৷ বরং আমলে সালেহ কে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে উৎসাহিত করা হয়েছে৷ তবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকলে দান কেন সেই পাগলা মসজিদের বাক্সেই ফেলে আসতে হবে? বহুপথ মাড়িয়ে সেই মসজিদেই কেন টাকা রেখে আসতে হবে? নিজের গ্রামে, মহল্লার মসজিদে কেন সেই দান করা হয় না? সকল মসজিদই তো আল্লাহর কাছে সমান, তাই না?
এখানে হয়তো বিশ্বাসগত কিছু অসংগতি আছে৷ যেই পাগলার নাম কে কেন্দ্র করে মসজিদ করা হয়েছে, হয়তো মনের বাসনা পূরণে তার হাত রয়েছে এমন বিশ্বাস মানুষ অন্তরে লালন করে৷ হয়তো তারা বিশ্বাস করে সেই পাগলা এখনো আল্লাহর কাছ থেকে তাদের আবদার মঞ্জুর করে আনতে সক্ষম৷ এজন্যই হয়তো অন্যসব মসজিদ থেকে সেখানের দান বা মানত আলাদা৷ এ ধরণের বিশ্বাস সুস্পষ্ট শিরক৷ আহারে, কত মানুষ মসজিদে দান করেও জাহান্নামের পথে এগিয়ে যাচ্ছে!
লেখক: শায়খ সালাহউদ্দীন মাক্কী
গবেষক, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।