তারাবিহ সালাত সংক্রান্ত জরুরি দুটি মাসআলা যা আমাদের জানা ও আমল করা জরুরী। নিম্নে তা উল্লেখ করছি:
একঃ তারাবিহ সালাতের চেয়ে এশার জামায়াতের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। তাই 'দীর্ঘ সালাত, একটু দেরিতে মসজিদে যাই' এই চিন্তা নিয়ে ইচ্ছা করে এশার জামায়াত শেষ হওয়ার পর মসজিদে গেলে তার জন্য এমন তারাবিহ কোনো ফজিলত নেই। এশার নামাজ অবশ্যই জামায়াতের সাথে পড়ে তারাবিহতে শরিক হতে হবে। তবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাস্তবিক কোনো কারণে জামায়াত ধরতে না পারলে তিনি বাহিরে একা একা ফরজ আদায় করে তারাবিহতে অংশ নিবেন। মাজুর হিসেবে আশাকরি আল্লাহ তাআলা তাকে সওয়াব দান করবেন।
দুইঃ অনেকে তারাবিহ সালাত শেষ হলে ইমামের সাথে বিতর না পড়ে বেরিয়ে যান। তাদের ইচ্ছা তাহাজ্জুদ পড়ে বিতর পড়বেন। কেননা রসুল সা. শেষ রাতে সবার শেষে বিতর পড়তে বলেছেন। যেমন হাদিসে এসেছে, ( اجْعَلُوا آخِرَ صَلاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا )
হাদিস তার স্থানে সঠিক থাকলেও রমজান মাসের জন্য এই চিন্তা সঠিক নয়। এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম দুটো মতামত পেশ করেছেন, যেমন:
ক. অধিকাংশ আলেমের মতে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে ইমামের অনুসরণ করা অর্থাৎ উনার সাথে তারাবিহ ও বিতর পড়ে নেওয়া। পরে একাকি কিয়ামুল্লাইল যত রাকাত ইচ্ছা পড়া । তবে আর বিতর পড়তে হবে না। কেননা এক রাতে দুইবার বিতর নেই।
খ. কিছু আলেমের মতে, যদি কেউ বিতর শেষ রাতে পড়তে চায় তাহলে ইমাম সাহেবের সাথে বিতর পড়বে কিন্তু নফল নামাজের নিয়ত করে দাঁড়াবে এবং তিন রাকাত পড়ে ইমাম সালাম ফিরিয়ে নিলে মুক্তাদি সালাম না ফিরিয়ে আরো এক রাকাত পড়ে রাকাত সংখ্যাকে জোড় করে নিবে। এইভাবে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবে।
কেননা, রসুল সা. বলেছেন,
من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليله
'যে ব্যক্তি রমজানে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত সালাত আদায় করবে, তার আমলনামায় সারারাত নফল ইবাদতের সওয়াব লিখে দেওয়া হবে।'
অতএব, এই হাদিসের পূর্ণ ফজিলত পেতে হলে বিতর পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকতে হবে। তারাবিহ সালাত পড়ে চলে গেলে এই হাদিসের বরখেলাপ হয় তাই উক্ত ফজিলত থেকেও মাহরুম থাকতে হয়।
তদ্রুপভাবে যারা সহিহ হাদিসের দোহাই দিয়ে ৮ রাকাত পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যান তারাও এই ফজিলত থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত থাকবে। আর এজন্যই শাইখ সালেহ আল উসাইমিন (রহ.) উপরোক্ত হাদিসটি দলিল রূপে পেশ করে বলেছেন, 'ইমাম সাহেব ৮ রাকাত, ১০ রাকাত বা ২০ রাকাত অথবা এর কমবেশি যাই পড়ুন না কেন মুক্তাদিকে তার সাথে পুরো সালাত পড়া উচিত।'
লেখক: শায়খ আসলাম হোসাইন,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।