রমজান শব্দটি বছরের একটা নির্দিষ্ট মাস বা সময়কে ইংগিত করে। সময়ের জ্ঞান বিস্তারে এর রয়েছে যথেষ্ট ভূমিকা। ইসলামের অনুসারী তথা মুসলমানরা সিয়াম সাধনায় এই মাসটি অতিবাহিত করে। এ মাসের শুরুর দিনটি প্রতি বছর এক নয়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পশ্চিম আকাশে নব চাঁদের আবির্ভাবে রমজানের সূচনা। তাই সময়ের গণনার সাথে চাঁদের যে সম্পর্ক, মুসলমান সম্প্রদায় এ বিষয়ে রমজানে অধিকতর সচেতন। কারন রমজানের শুরু ও শেষ উভয়ে চাঁদ উঠার ভূমিকা মূখ্য।
বাংলাদেশে এ বছরে রমজানের সূচনা শুক্রবার, আবার শেষও শুক্রবার হতে চলছে। মুসলমানদের জন্যে শুক্রবার বরকতপূর্ন দিন, সাথে রমজান যুক্ত হয়ে এর মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা ধর্মপ্রান মুসলমানকে মহান রবের রহমত কামনায় উজ্জীবিত করে। আল্লাহর নৈকট্য লাভে সবাই ব্রত হয়।
রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটা বছরের সবটা সময় ঘুরে ঘুরে আসে। প্রতি বছর চাঁদের হিসাবের দশদিন এগিয়ে যাওয়ায় একজন মানুষ তার ৩৬ বছরের জীবদ্দশায় প্রতিটি ঋতুতে রমজানে সিয়াম পালনের সুযোগ পাবে। প্রচন্ড শীতের মত প্রচন্ড গরমেও একজন মুমিনকে সিয়াম সাধনায় মগ্ন থাকতে হয়। সবচেয়ে বড়ো দিনের সাথে সাথে সবচেয়ে ছোট দিনের রোজা পালনের সুযোগ রয়েছে তার।
রমজান মুমিন কে সময়ের বিষয়ে তাগিদ দেয়। এর সেহরী শেষ সময় যেমন সময়ের সচেতনতা শিখায় তেমনি সময় সচেতনতার বিষয় রয়েছে ইফতারিতে। তাই এ মাসে প্রতিদিনের সময় আপডেট যেনো মানুষকে আয়ত্বে নিতে হয় ধর্মীয় কারনে। কারন নির্দ্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট আগেও যেমন ইফতার করার সুযোগ নেই, তেমনি নির্দ্দিষ্ট সময় পর সেহরী খাবারও সুযোগ নেই। এ যেনো সময়ের দৌড়ে দৌড়াতে হয় সকল মুমিনগনকে।
সময়ের সবচেয়ে বড়ো তাগিদ রয়েছে এ রমজানে, কারন এ রমজানে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে রয়েছে একটা রাতের বর্ননা, যে রাত হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। তবে কোন রাত টি এমন মহিমান্বিত রাত সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা নেই। আছে আনুমানিক সময়ের ধারণা যা ২০ রমজান থেকে শুরু। এমন রাতের সন্ধানে অনেক মুমিনগন ইতিকাফ ধারণ করেন যেনো এতো উত্তম রাতের সৌভাগ্যবান হতে পারেন।
রমজানে সিয়াম সাধনার পর মুমিনদের জন্যে অনেক সুখের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ আনন্দ। পশ্চিম আকাশ নূতন চাঁদের দেখায় যেনো সবাই এক সুরে গেয়ে উঠে 'রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ'! গানটির লাইনগুলো ছোট বেলা থেকে হৃদয়ে নাড়া দেয় যথারীতি। ইবাদত হলো রমজানের মূখ্য বিষয়। আর এমন ইবাদত ঠিক রাখতে রমজানে একজন মুমিন কে সারাক্ষণ সময়ের জ্ঞান নিয়ে চলতে হয়।
আমাদের দেশে চাঁদ দেখা নিয়ে অনেকে অযথা বিতর্কে জড়ান। তবে এটা কোনো প্রেজক্রাইভড কোনো সময় নয়। চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা ও চাঁদ দেখে রোজা শেষ করাই হলো ইসলামের মুল দীক্ষা। এতে রোজা ৩০ হউক বা ২৯ হউক। কেউ কেউ এ বিষয়ে শুধু শুধু সরকারের সমালোচনা নিমজ্জিত হয় যা ঠিক নয়।
'আহলান সাহলান, মাহে রমজান' এই শ্লোগানে আসা রমজান প্রকৃতির নিয়মে একদিন শেষ হয়ে যায় নতুন আরেকটি শ্লোগানে 'আলবিদা আলবিদা'। একজন প্রকৃত মুমিনের জন্যে এমন বিদায় অনেক কস্টের। কিন্তু নিয়ম তাই, রমজান চলে যায়। তবে মুসলমানদের দিয়ে যায় এক প্রশিক্ষণ।
লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
মাশাআল্লাহ
উত্তরমুছুন