সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির তীব্রতা ও কৃত্রিম তীব্রতা যে হারে বেড়ে চলছে তা মানুষের বসবাসের জন্য যেন এক প্রকার হুমকি। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ চারদিকে যেন শুধু আগুন আর আগুন। এগুলো কেন হচ্ছে? এর সমাধান কিসে? অস্থির প্রকৃতি ও কৃত্রিম অস্থিরতা নিয়ে 'আগুন, আগুন, আগুন চারদিকে শুধু আগুন' এ শিরোনামে এডভোকেট সাজজাদুল ইসলাম রিপন স্যার অল্প বাক্যে চমৎকার কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। আজ 'দৈনিক লেখক' পাঠকবৃন্দের জন্য তার লেখাটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।
এডভোকেট সাজজাদুল ইসলাম রিপন স্যার লিখেছেন-
শুধু আগুন। মনে আগুন, শরীরে আগুন, বাতাসে আগুন, বাজারে আগুন, দামে আগুন। উষ্ণতার প্রভাব যেনো সর্বত্রই। এক কথায় মানুষ স্বস্তিতে নেই। মানব জীবনে স্বস্তির সরবরাহকারী একমাত্র মহান রব। তাই তার নির্দেশনায় রয়েছে মানুষের জন্যে মঙ্গল। কেবলমাত্র মঙ্গল শোভাযাত্রা কখনোই মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে নি। কারন মানুষ প্রবর্তিত কোনো বিধিবিধান মানুষের কল্যান কখনো বয়ে আনেনি। তবুও গাফেল ও দুর্ভাগা মানুষেরা এমন কার্যক্রম থেকে বিরত নয়।
গতকিছুদিনের তাপমাত্রা মানুষের সহ্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অসহায় মানুষের কিছুই করার নেই। আর্থিক সংগতিপূর্ণরা নিজেদের শীততাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেলেও তার শীততাপ যন্ত্রই ছড়াচ্ছে বহুগুনে উষ্ণতা। প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ প্রাকৃতিক উপায়ে করার আগ্রহ মানুষ অনেক আগেই হারিয়েছে। কৃত্রিম মাধ্যমকে বেঁচে নিয়েছে মানুষ। তাই ফলাফল একেবারে উল্টো। গাছ কেটে উজাড় করা মানুষেরা বহুসীমানার ছায়াতল ছেড়ে আবদ্ধ হচ্ছে ঘরের কোনো ছোট্ট এক শীততাপ নিয়ন্ত্রণের নিয়ন্ত্রণে। জীবনের পরিধি হচ্ছে ছোট। প্রচুর গাছ লাগানো হতে পারে এর সমাধান।
বাতাসে আগুনের পাশাপাশি এ দেশে বাজার দরে ব্যাপক আগুন যেনো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যে একেবারে নাভিশ্বাস অবস্থা। প্রতিটি পন্যের বাজার দর বৃদ্ধি যেনো নিয়ন্ত্রণহীন জনজীবনের প্রতিচ্ছবি। কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, নেই ভোক্তা অধিকার দফতরের দৃশ্যমান কার্যক্রম। ছোট্ট একটা বেবীর একজোড়া জুতো কি করে ১২০০/১৩০০/১৫০০ হয়, তাও আবার আর্টিফিসিয়াল লেদার। ঈদ নামক উৎসবটা যেনো দিনে দিনে সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। কে থামাবে এমন গতিহীন ব্যবসায় সমাজ কে।
গত কিছুদিন ধরে চলছে বাজারে / মার্কেটে আগুন। একের পর এক মার্কেটে আগুন কেমন যেনো ঘটনার ধারাবাহিকতাকে ইংগিত করে। মনে প্রশ্ন জাগে, এটা কোনো ইচ্ছাকৃত কিছু নয় তো? ঘটনার সময় ও ধরনেও রয়েছে যথেষ্ট মিল। আজকাল সবকিছুর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হতে না হতে ওই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। প্রকৃত তথ্য পাওয়া যথেষ্ট মুশকিল। তবে ঘটনা যেভাবে হউক না কেনো এখন আর নিজের সম্পত্তির নিরাপত্তা অন্যে দিবে, এই ধারণায় না থাকা ভালো। প্রতিটি বাজার সমিতির উচিত হবে নিজ উদ্যোগে পাহারা বসানো।
বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মানুষের শরীর তথা মনেও পড়েছে। কেউ স্বাভাবিক জীবনে নেই। এর কারন হরেক রকম! আজ মানুষের জীবনে প্রতিটি অসন্তোষ ও অস্বিরতার জন্যে মানুষ নিজে দায়ী। পবিত্র কুরআনের বাণী, 'জলে ও স্থলে মানুষের সকল বিপর্যয়, মানুষের দু'হাতের কামাই'। তাই আত্নসমালোচনা হওয়া উচিত সকলের। কারন অধিক মুনাফাকারী ব্যবসায়ীরাও মূহুর্তে ফকির বনে যান। মানুষ নিজে অনিয়ন্ত্রিত হলে মহান রব সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। আর এটাই প্রকৃতির বিচার (natural justice)।
লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।