ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়- মুহাম্মাদ মাসউদ বিন মুবাশ্বির

ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়

ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়

মানুষভেদেই ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা অনিবার্য ব্যাপার। কেউ হয় উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী, কেউ হয় রুচিশীল, কেউ হয় খুব হাসি খুশি, কেউ হয় ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী, কারো আচরণ হয় খুব সুন্দর, ব্যবহার হয় মাধুর্যপূর্ণ। কেউ উচ্চ চিন্তাশীল হয়, আত্মবিশ্বাসী হয়, উদ্যমী আর পরিশ্রমী হয়, মানুষকে কাছে টানার মতো দক্ষতা থাকে, সবাইকে ভালোবাসে। অন্যদিকে অনেকে হয় অরুচিশীল, হাসি খুশি থাকতে পারে না; সারাক্ষণ গোমড়া মুখে থাকে, বিরস মুখে কথা বলে। অনেকে আবার নেতিবাচক চিন্তা মনের মধ্যে লালন করে, আত্মবিশ্বাসহীন হয়, স্থুলচিন্তার অধিকারী হয়। আচার ব্যবহারে হয় উগ্র, কাজে কর্মে হয় অলস, মানুষ তার থেকে দূরে থাকে, সেও মানুষজন থেকে দূরে থাকে, সে কাউকে ভালোবাসে না, তাকেও কেউ ভালোবাসে না। তো এ সবকিছুর মধ্যে নিজের ব্যক্তিত্বের একটা প্রভাব রয়েছে।

ব্যক্তিত্ব যদিও জন্মগত ও ব্যাপার, স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। তবুও আমরা চেষ্টা করে আমাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আনতে পারি। চেষ্টা ও অনুশীলন করলে অবশ্য আমাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে। (আবার পড়ুন) চেষ্টা ও অনুশীলন করলেই তবে আমরা সফল হবো এবং আমাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে। চেষ্টা ও অনুশীলন ছাড়া কিন্তু হবে না। তো চলুন, উন্নত ব্যক্তিত্ববান হওয়ার জন্য আমরা কি কি উপায় গ্রহণ করতে পারি (ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়), সে সম্পর্কে একটু জেনে আসি।

১. যেসব কথা শুনতে আপনার খারাপ লাগে, আপনিও সেসব কথা অন্য কাউকে বলবেন না:

অন্য কেউ আপনার সাথে যে আচরণ করলে আপনি কষ্ট পান, সে আচরণ আপনিও অন্যদের সাথে করবেন না। কথা কিংবা কাজে কাউকে কষ্ট দিবেন না।

২. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়| তুই বলে সম্বোধন করবেন না:

কখনো কোনো রিকশাচালক বা দিনমজুর পেশার লোকজন কিংবা আপনার আওতাধীন কাজ করা লোকগুলোকে আপনি তুই বলে সম্বোধন করবেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষতি করবে। বস্তুত, এটা তো কোনো স্মার্টনেসও না, স্মার্টনেস তো হলো, আপনার কথা কাজে কেউ কষ্ট পাবে না।  আপনার সমমানের লোক হোক বা নিম্নপর্যায়ের লোক হোক, সবাই আপনার ব্যবহারে খুশি হবে।  আর নিম্নপেশার লোকজনকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বললেই বা কি হয়! আপনি একটু সম্মান দিয়ে কথা বলে দেখুন না, আপনি কতোটা সম্মান পান। আপনি মানুষকে সম্মান দিন, আপনি সম্মান পাবেন।

৩. অন্যের মতামত বা বক্তব্যকে ছোট করে দেখবেন না:

দ্বিমত পোষণ করার অধিকার অবশ্য আপনার আছে। তবে বিনয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করুন, খারাপ ভাষায় নয়। দ্বিমত পোষণ করা খারাপ নয়, তবে খারাপ ভাষায় দ্বিমত পোষণ করা অবশ্য খারাপ। আপনি অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন, আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্যের মতামতকে অশ্রদ্ধার চোখে দেখবেন, তো আপনার মতামতকেও অশ্রদ্ধার চোখে দেখা হবে। এটাই নিয়ম। সুতরাং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন, আপনার ব্যক্তিত্ব বাড়বে।

৪. নিজেকে বড় করতে গিয়ে অন্যকে ছোট করবেন না:

আমরা সবাই বড় হতে চাই, সম্মানিত ব্যক্তি হতে চাই। গড়তে চাই উন্নত জীবন, হতে চাই বিত্তবান এবং খ্যাতিমান। কিন্তু এও সত্য, আমাদের কেউ চায় না, অন্য ব্যক্তি বড় হোক, বিত্তবান হোক কিংবা খ্যাতিমান হোক। সবাই চাই আমিই হবো সবকিছু, অন্যকে হতে দেবো না। এটা ভালো গুণ না, এ গুণ আপনাকে বড় হতে দেবে না, জীবনে সফল হতে দেবে না। নিজে এমনসব গুণ অর্জন করুন, যেগুণগুলো আপনাকে অন্যদশজন থেকে আলাদা করে দেবে, অন্যদেরকে পিছনে ফেলে  আপনি এগিয়ে যাবেন আপনার নিজগুণে।   কাজেই নিজেকে বড় করতে গিয়ে অন্যকে ছোট করবেন না। নিজগুণে বড় হোন, অন্যকে ছোট করে নয়। ব্যক্তিত্ববানরা নিজগুণেই বড় হয়, অন্যকে ছোট করে নয়।

৫. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ কিছু উপায়| অন্যকে ভালোবাসুন:

সবাইকে কাছে টানুন, ভালোবাসুন। শত্রুকেও ভালোবাসুন, শত্রুদের সাথেও ভালো ব্যবহার করুন। আপনার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেনই তো; শত্রুদের সাথেও ভালো ব্যবহার করুন। গরিব, ধনী, কাছের, দূরের, পরিবারের, পরিবারের বাইরের সবাইকে ভালোবাসুন। সর্বপ্রথম নিজেকে ভালোবাসুন। আর নিজের ভালোবাসা থেকে অন্যদের মাঝেও ভালোবাসা বিলিয়ে দেন। হাসিমুখে কথা বলুন। কারো সাক্ষাতে মিষ্টিমুখে অভিবাদন জানান। যতটুকু সম্ভব ব্যক্তিগত দুঃখ কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

৬. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ উপায়|কখনো তর্কে জড়াবেন না: 

তর্ক একটা জঘন্য ব্যাপার। তর্ক থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। অল্প সময়ের তর্ক আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে মাটির সাথে  মিশিয়ে দিতে পারে, তর্ক আপনার মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে দিতে পারে।

বুঝদার ব্যক্তিরা তর্ককে এড়িয়ে চলে। ওজনদার মানুষ কখনো তর্কে জড়ায় না। মনে রাখবেন, তর্ক করে কখনো কোনো উপকার হয় না, উল্টো অপকারই হয়; সময় বৃথা যায়, যার সাথে তর্ক করলেন তার সাথে অনেক সময় সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই কখনো তর্কে জড়াবেন না, নিজের সম্মান নষ্ট করবেন না। নিজের সম্মান বজায় রাখুন, তর্ক এড়িয়ে চলুন।

৭. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করুন:

সুস্থতা সুখের চাবিকাঠি। সুস্থ থাকতে ব্যায়াম করুন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম করুন, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এক্সারসাইজ, শারিরীক ব্যায়াম করুন। সুষম, হেলদি খাবার খান। নিয়মিত ঘুমান। রুটিন করে চলুন।

৮. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ উপায়|পরিশ্রমী হোন:

জীবনে কিছু করতে হলে অবশ্য আপনি পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া কিছুই হয় না। পরিশ্রম করবেন, তো ভালো ফল পাবেন। অলস হবেন না, অলসতা আপনার মাথায় ঝেকে বসলে দুনিয়ার সবকিছু আপনার কঠিন মনে হবে। তাই পরিশ্রমী আর উদ্যমী হোন, অলস হবেন না।

৯. ব্যক্তিত্ববান হতে হলে কখনো দুর্বলতা প্রকাশ করবেন না:

সবারই কিছু না কিছু দুর্লতা থাকে। অনেকে আবার আপনার দুর্বলতাকে সুযোগ মনে করতে পারে, সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারে, তাই সব জায়গায় আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করবেন না। জীবনের সব পদেই আপনি দৃঢ় থাকুন, ঝড় ঝাপটা যতই আসে আপনি আপনার লক্ষ্যে অটুট থাকুন, স্থির থাকুন।

১০. ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ উপায়|পরিকল্পনা করে কাজ করুন:

ব্যক্তিত্ববানরা পরিকল্পনা করে কাজ করেন। উপরন্তু, কোনো কাজই পরিকল্পনা ছাড়া সুষ্ঠু হয় না। কোনো কাজ সুচারুরূপে শেষ করতে হলে  আপনি আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হবে, লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাখতে হবে, টার্গেট ঠিক করতে হবে।

আপনার টার্গেট ঠিক রাখুন, টার্গেটের দিকে দুর্বার গতিতে ছুটে চলুন। আপনি এ বিশ্বাস ও সাহস মনের মধ্যে রাখুন, যে আপনি আপনার লক্ষ্যে যেভাবেই হোক পৌঁছুবেন। দেখবেন, কোনো বাঁধাই আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না, আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন, তবে দৃঢ় বিশ্বাস ও উচ্চ মনোবল থাকতে হবে।

১১. নিজের কাজ নিজে করুন, অন্যের সাহায্যে বসে থাকবেন না:

নিজের কাজ নিজে করা একটা ভালো গুণ। অন্যের সাহায্যের আশায় নিজের কাজ নিজে করলেন না, পরে দেখা যাবে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই যতটুকু পারেন, আপনার যতটুকু সাধ্য সেটুকু দিয়েই আপনার কাজ আপনিই করুন।

উপসংহারে|ব্যক্তিত্ববান হওয়ার সহজ উপায়:

ব্যাক্তিত্ববান হওয়ার কৌশলগুলোর ফিরিস্তি আসলেই দীর্ঘ। সংক্ষিপ্ত কথায়, আপনি নিজেকে এভেইলেবেল করবেন না, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন, কম কথা বলুন এবং ভেবেচিন্তে কথা বলুন, হাসি মুখে কথা বলুন, বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করুন, অসহায় মানুষের সেবা করুন, সুস্পষ্ট কথা বলুন, আগ্রহ বাড়ান, দক্ষতা বাড়ান, আনন্দে থাকুন, সৎ থাকুন, নিজের উপর ভরসা রাখুন, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হোন, জানার পরিধি বাড়িয়ে তুলুন। আপনার ব্যক্তিত্বকে উন্নত করতে এ গুণগুলো অনেক সহায়ক হবে , ইন শা আল্লাহ।

আগামীর ব্যক্তিত্ববানদের জন্য রইল আগাম শুভেচ্ছা!

লেখকঃ মুহাম্মাদ মাসউদ বিন মুবাশ্বির

জামিয়া ইসলামিয়া দারুলউলুম কানাইঘাট, সিলেট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম