বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত প্রদান কী শরিয়ত সম্মত? শায়খ সালাহউদ্দীন মাক্কী

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত প্রদান কী শরিয়ত সম্মত?

সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত প্রদান করা যাবে কি যাবে না? এ বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যাকাত প্রদান করা যাবে? এটি কি শরিয়ত সম্মত? এ প্রশ্নের জবাবে প্রখ্যাত তরুণ আলিমেদ্বীন ও ইসলামী গবেষক শায়খ সালাহউদ্দিন মাক্কী তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লিখেছেন-


যাকাত বিত্তশালী মুসলিমের উপর এমন এক অর্পিত দায়িত্ব যার তাফসীল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। যাকাতের হক্বদার কারা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সাধারণ দান ও যাকাত কে কখনোই মিলিয়ে ফেলার সুযোগ নাই। 


কোন মুসলিম অমুসলিম কোন কাজের লোক কে যাকাত আদায়ের খাত নির্ধারণ করে যাকাতের অর্থ বা সম্পদ তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব অর্পণ করতে পারবে কী না, এই মর্মে ফুক্বাহায়ে কিরামের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। 


ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ সহ জামহুরুল উলামা মনে করেন, অমুসলিম ব্যাক্তি কে যাকাতের অর্থ হক্বদারের কাছে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব অর্পণ বৈধ। এ ক্ষেত্রে অমুসলিম ব্যাক্তির বিশ্বস্ততাই যথেষ্ট মুসলিম হবার প্রয়োজন নাই। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ এর ব্যাতিক্রম মত পেশ করে বলেছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অমুসলিম ব্যাক্তির হাতে অর্পণ বৈধ নয়। সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন নজিরও নেই।

 

এখন কথা হলো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে যাকাত বিতরণের দায়িত্ব অর্পণ কতটা শরিয়ত সম্মত?


প্রথমত: অমুসলিম কাজের লোক আর বিদ্যানন্দ এ দুইয়ের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট। অমুসলিম কাজের লোকের বিশ্বস্ততা মালিক নির্ধারণ করতে পারে। বিদ্যানন্দের ব্যাপারে যা অসম্ভব।

দ্বিতীয়ত: বিদ্যানন্দের অবশ্যই যাকাত প্রদানের খাত নিয়ে স্টাডি থাকার সুযোগ নাই বা সেটার প্রয়োজনও তাদের নেই, তাই অন্যান্য দান ও যাকাত কে মিলিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যাকাত আদায়কারীর আমানত যথাস্থানে পৌঁছানোও প্রশ্নবিদ্ধ। 


তৃতীয়ত: কোন অসহায় অমুসলিম কে সাধারণ দানের অর্থ প্রদান জায়েয হলেও যাকাত প্রদান জায়েয নেই । তবে যদি ইসলামের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকে তবে তারাও যাকাতের অর্থ গ্রহণের অধিকার রাখে । বিদ্যানন্দ মুসলিমদের যাকাতের অর্থ বিতরণে এই পার্থক্য নির্ণয়ের যোগ্যতা রাখে বলে মনে হয় না, কিংবা এর প্রয়োজনীয়তাও তাদের নেই। 


চতুর্থত: যেহেতু আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ বহু নির্ভরযোগ্য সংস্থা যাকাত গ্রহণ ও বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছ। তারা যথাযথ শরিয়া আইন মেনে পরিচালিত হচ্ছেক। তাই সন্দেহ ও সংশয়ের আশ্রয় নিয়ে একটি ফরয ইবাদাত আদায় একজন সচেতনতা মুসলিমের পক্ষে সমীচীন নয়। 


পঞ্চমত: বিদ্যানন্দের নানান সামাজিক কার্যক্রমের আড়ালে হিন্দু ধর্ম প্রচার ও প্রসারের অভিযোগ ফেলে দেয়ার মত নয়। তাই এর বড় গুরু দায়িত্ব তাদের কাছে অর্পন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত।


লেখক: শায়খ সালাহউদ্দীন মাক্কী

উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম