সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যতোগুলো বিষয় নিয়ে তুমুল আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয় হলো 'এক কালেমায় রুটি রুজি আর এক কালেমায় ফাঁসী (কালেমা এক না ভিন্ন?)'। মূলত একটি ইসলামী গানকে কেন্দ্র করে এই সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি। এখন সাধারণ মানুষ জানতে চায় আসলে প্রকৃত সত্য কি? কালেম এক না ভিন্ন? শিল্পী তার ইসলামী গানে এই কথা দ্বারা আসলে কি বুঝিয়েছেন?
এসকল প্রশ্নের চমৎকার একটি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন জনপ্রিয় তরুন গবেষক আলিম ও লেখক শায়খ আসলাম হোসাইন। 'দৈনিক লেখক' পাঠকদের জন্য আমরা তার লেখাটি এখানে তুলে হুবহু ধরছি, ইনশাআল্লাহ।
শায়খ আসলাম হোসাইন লিখেছেন-
এক কালেমায় রুটি রুজি আর এক কালেমায় ফাঁসী (কালেমা এক না ভিন্ন?) ইদানিং এই প্রশ্নটা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তুলা হচ্ছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছেন কালেমাকে ভাগ করা যাবে না। কালেমা একটাই। কালেমাকে ভাগ করে ফিতনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তাহলে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, হজরত আবু বকর (রা.)-এর কালেমা আর আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের কালেমা এক না দুই? আমাদের কালেমা আর কাদিয়ানীদের কালেমা কি এক, যদিও একই কালেমা সবাই পড়ি? মূলত শাব্দিক দিক দিয়ে কালেমা এক কিন্তু বুঝ, ব্যাখ্যা , উদ্দেশ্য ও চেতনার দিক থেকে কালেমা ভিন্ন।
শিল্পী কখনোই কালেমাকে ভাগ করেননি বরং তার এটাই বুঝানো উদ্দেশ্য যে, একই কালেমা তুমি পড়ো, আমিও পড়ি। কিন্তু যে কালেমা পড়ে তুমি আরাম আয়েশে পুলিশের পাহারায় থাকো, সেই কালেমা পড়া ও বাস্তবায়নের কারণে পুলিশ আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়। একই কালেমায় এতো পার্থক্য কেন?
এক কালেমায় রুটি রুজি আর এক কালেমায় ফাঁসী (কালেমা এক না ভিন্ন?) এই প্রশ্নের বিশ্লেষণে শায়খ আসলাম হোসাইন এরপর লিখেন-
যারা এখানে কালেমার দুইটা ভাগ খুঁজতেছেন তারা গানের প্রকৃত অর্থ এবং মর্মার্থ বুঝতেই পারেননি। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা হচ্ছে। আর আপনারা বিরোধিতা করবেনই বা কেন? এই গান আপনাদের গায়ে লাগবে কেন?
‘রুটিরুজি’ বলতে তো নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। যারা দিনের বেলায় কালেমার জিকির করে আর রাতের বেলায় আল্লাহদ্রোহী রাষ্ট্র শক্তির সাথে আঁতাত করে এবং তাদের তেল মর্দন করে, এখানে তারাই উদ্দেশ্য।
আমিও তো আল্লাহর মেহেরবানিতে কোনো জুলুমের শিকার হইনি। আমার মতো অসংখ্য বক্তা, আলেম, লেখক, কলামিস্ট ও ঈমানদার আছেন যারা এখনো এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। সবাইকে আল্লাহ তাআলা নিরাপদে রাখুন, এই দোয়া করি।
এক কালেমায় রুটি রুজি আর এক কালেমায় ফাঁসী (কালেমা এক না ভিন্ন?) এমন প্রশ্ন যারা তুলেছেন তাদের পাল্টা প্রশ্ন করে শায়খ আসলাম হোসাইন এরপর লিখেছেন-
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা জেল জুলুমের শিকার না হলেও তো এই গান আমাদের গায়ে লাগেনি। বরং এই গানের পক্ষে আমাদের অবস্থান সবসময়ই ছিল। তাহলে আপনাদের লাগবে কেন? আপনারাও তো এমন গানকে স্বাগত জানাতে পারতেন কিন্তু তা না করে উল্টো নিজের গায়ে মেখে নিলেন।
এখন যদি কেউ আপনাদের কালেমা নিয়ে আপত্তি তুলে বলে যে, 'আপনারা একই কালেমা পড়লেও রাতের বেলায় করমর্দন পার্টির লোক, তাই আপনাদের গায়ে লেগেছে। জেল জুলুমের শিকার না হলেও যারা জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কালেমার জন্য যারা ফাঁসিতে ঝুলেছেন তাদের উত্তরসূরি হলে গায়ে লাগতো না।' তাহলে এমন আপত্তি তোলা কি খুব অবান্তর হবে?
লেখক: শায়খ আসলাম হোসাইন,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
Jazakallah Khairan
উত্তরমুছুন