শায়খ আহমাদুল্লাহ সম্পর্কে যা লিখলেন নুর মুহাম্মদ আবু তাহের

শায়খ আহমাদুল্লাহ সম্পর্কে যা লিখলেন নুর মুহাম্মদ আবু তাহের

বর্তমান সময়ের তরুণদের আইডল, একজন বিজ্ঞ আলিম হিসেবে যিনি সম্মানিত তেমনি ইসলামের জন্য দেশ ও মানবসেবায় যিনি অন্যন্য ভুমিকা পালন করে চলছেন তিনি হলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি তার খেদমত হিসেবে প্রতিষ্ঠান করেছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। যার কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সচেতনমহল নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল রয়েছেন। এবার শায়খ আহমাদুল্লাহ'র প্রশংসা ও সম্মানে ফেসবুকের এক পোস্টে লিখলেন গার্ডিয়ান পাবলিকেশনের এমডি নুর মুহাম্মদ আবু তাহের। একাধারে যিনি একজন সমাজসেবক, চেয়ারম্যান ও  রাজনীতিবিদ। 

শায়খ আহমাদুল্লাহকে নিয়ে যা লিখলেন নুর মুহাম্মদ আবু তাহের তা এখানে তার ফেসবুক পেইজ থেকে তুলে ধরা হলো:


একজন আলিমের কাছে আপনি সচরাচর এমনটি দেখবেন না। আলিম মানেই ইলমি কাজে সম্পৃক্ত, ইলমি অবদান রাখেন। আলিমের মূল কাজই উম্মাহকে পরিশুদ্ধ করার প্রচেষ্টা। একজন আলিম ঠিক কতটা ইম্প্যাক্টফুলি সমাজের মানুষকে পরিশুদ্ধ করতে পারছেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ বক্তৃতা দিয়ে, কেউ লিখে, কেউ একাডেমিক্যালি মানুষকে মোটিভেট করেন, আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন। একেকজনকে আল্লাহ তায়ালা একেক গুণে গুণান্বিত করেছেন। প্রত্যেক আলিমই আমাদের কাছে সম্মানিত।


তবে শায়খ আহমাদুল্লাহ এই জায়গায় অনন্য। তিনি দাওয়াতি কাজের স্বভাবসুলভ পদ্ধতির বাহিরে এক অসাধারণ পথ ধরে মানুষকে উজ্জীবিত করছেন। তিনি একজন সোস্যাল একটিভিস্ট আলিম। এটা খুব সিগনিফিকেন্ট। কেন? 


মনে রাখতে হবে, তার কোনো সংগঠিত সাংগঠনিক শক্তি নাই। তিনি একজন ব্যক্তি, জনপ্রিয় ব্যক্তি মাত্র। আমাদের দেশে ইসলামপন্থীরা নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য ব্যাপক কর্মতৎপর। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দল, চিন্তাধারা স্ব স্ব জায়গা থেকে ব্যাপক কাজ করে চলেছেন। কিন্তু একজন জনপ্রিয় আলিম তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কল্যাণে অব্যাহতভাবে পরিশ্রম করাটা খুবই সিগনিফিকেন্ট। সহজে এমনটা আমাদের আলিমরা করেন না। কারণ, এখানে প্রচণ্ড ঝুঁকি আছে। 


কেন আমি শায়খের কাজটাকে বড়ো করে দেখি? 

কারণ, ট্র্যাডিশনালি আলিমরা কেবল তাত্ত্বিক বয়ান দিতে অভ্যস্ত। এটা তাদের দোষ নয়, আবহমান কাল ধরে এমনটিই হয়ে আসছে। বক্তৃতা, বিবৃতি, আলোচনা, লেখনি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও গবেষণা কর্ম দিয়ে আলিমরা ইসলামের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান তুলে ধরেন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ আলিমরাই সেসব সমাধান সমাজে হাজির করতে তৎপর থাকেন না। ধরেই নেওয়া হয়, আলিমরা কেবল বলে যাবে, সমাধান বাতলে যাবে; আর কাজ করবে অন্য কেউ। 


আপনি যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি নিয়ে একজন আলিমের কাছে দারুণ বক্তৃতা অথবা লেখনি পাবেন। কিন্তু তাকে সহজে সে অর্থব্যবস্থা বাস্তবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে দেখবেন না, এটা অন্যের কাজ। আপনি আলিমের কাছে সাংস্কৃতিক আঁধারের সমাধান পাবেন কথায় ও কলমে। কিন্তু তাকে আপনি বাস্তব মাঠে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে পাবেন না। আপনি রাজনৈতিক মুক্তি নিয়ে দারুণ দারুণ আর্টিকেল পাবেন, কিন্তু মাঠে সেই অর্থে খুঁজে পাবেন না। 


আপনি হামেশাই বলতে শুনবেন, ইসলাম দারিদ্রতার সমাধান; কিন্তু বাস্তবে দরিদ্র মানুষদের জন্য উদ্যোগ দেখবেন না। আপনি পর্দার বিধিবিধান নিয়ে সিরিয়াস আলাপ শুনবেন, কিন্তু বাস্তবে পর্দা করতে ইচ্ছুক, এমন দরিদ্র মা-বোনদের মিনিমাম পর্দা ম্যাটেরিয়ালসে সহায়তা করতে দেখবেন না। আপনি মাহফিলে সুললিত কণ্ঠে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আটার বস্তা কাঁধে করে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার কাহিনি শুনবেন; কিন্তু সহজে সেই কাহিনি বলা আলিমকে এক কেজি আটা নিয়ে তার প্রতিবেশির ঘরে যেতে দেখবেন না। 


ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বহু মানবিক ঘটনার বয়ান শুনবেন। কিন্তু এত সহজে কোনো আলিমকে হসপিটালের রোগী ভিজিট করতে দেখবেন না। ইমাম সাহেব, নামাজের ব্যাপারে সিরিয়াস আলাপ করবেন, কিন্তু সহজে তাকে বেনামাজির বাড়িতে দাওয়াতি কাজে দেখবেন না। সুদের বিরুদ্ধে প্রচুর ওয়াজ শুনবেন, ড. ইউনুসকে সুদখোর বলে গালি দিতে শুনবেন; কিন্তু কোনোভাবে আলিমদের মানুষের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বাস্তব উদ্যোগ নিতে দেখবেন না। 


ব্যাপারটা এমন, আলিমদের কাজ তত্ত্ব বলে দেওয়া আর মানুষের কাজ সে তত্ত্ব গ্রহণ করে মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা করা। এটা সামগ্রিক ইসলামাইজেশনের জন্য একটা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। যে কথা আমরা বলছি, তার প্রয়োগ নিয়ে কোনো টেনশন নাই, উদ্যোগ নাই (একেবারেই নাই, এমন নয়; খুবই নগণ্য।)


শায়খ আহমাদুল্লাহ এখানেই সিগনিফিকেন্ট। তিনি ঘরের দেয়ালের বাহিরে এসে দুনিয়াকে দেখতে চেয়েছেন। তিনি আলিমদের জন্য একটা মিনিমাম স্টান্ডার্ড সেট করতে পেরেছেন- চাইলে কিছু করা সম্ভব। তিনি ব্যক্তি হিসেবে দারুণ পারফর্ম করছেন। দুনিয়ার অনেক মানুষ তাকে বিশ্বাস করেন এবং বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট পারফরম্যান্স তিনি শো করেছেন। 


আপনি তাকে অবজ্ঞা করতে পারেন, ভিন্নভাবেও দেখতে পারেন। তিনি আমার চোখে আলিম সমাজের হিরো। এসব না করেও তিনি শত কোটি টাকা উপার্জন করতে পারতেন। প্রতিদিন মাহফিল করে ৫০ হাজার টাকা নিলে (এটা তিনি পাওয়ার মতো যোগ্য) এক মৌসুমে ২০০ মাহফিল করলে (১০০ দিনে ২টি করে মাহফিল) ১ কোটি টাকা রোজগার করতে পারেন। 


তার ব্যাপারে হুদাই প্রশংসা করার কিছুই নাই। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা নন, যে স্তুতি গেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। আমার মনে হলো, এই আলিমকে আমাদের দেশের অনেক আলিমই কিছুটা অনুসরণ করতে পারেন। কথা বলার চেয়ে কাজটা খুব যে জরুরি। 


ভুল বুঝবেন না। অবশ্যই আমাদের কথক, লেখক, গবেষকের দরকার আছে; একইসাথে আমাদের এমন একদল আলিম দরকার, যারা সেসব কথা, লেখনি ও গবেষণাকে প্র্যাকটিক্যালি মানুষের সামনে উপস্থাপন করবে। শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাকে আল্লাহ তায়ালা অনেক বেশি সম্মানিত করুন।

তথ্যসূত্র: https://www.facebook.com/noorjnu


1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম