‘আহলে কুরআন একটা ভ্রান্ত সম্প্রদায়’- শায়খ আসলাম হোসাইন

সাম্প্রতিক সময় ধরে আহলে কুরআন সম্প্রদায় আমাদের দেশে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ বেশ প্রচার ও প্রসার করে যাচ্ছে । তাদের এই ভ্রান্ত মতবাদ সাধারন মানুষকে ইসালামের আকিদা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারন মানুষ হাদিস বিদ্ধেষী মনোভাব লালন করছে। তারা নিজের বিবেক/আকল দিয়ে হাদিস গ্রহণ ও বর্জন করে। সোশাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে বেশ আলোচোনা। তাই আহলে কুরআন সম্প্রদায়কে ‘আহলে কুরআন একটা ভ্রান্ত সম্প্রদায়’ উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট লিখছেন এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামী গবেষক লেখক ও আলিম শায়খ আসলাম হোসাইনতার সেই লেখাটি আমরা 'দৈনিক লেখক' পাঠকদের উদ্দেশ্য এখানে হুবহু তুলে ধরছি, ইনশাআল্লাহ। 

শায়খ আসলাম হোসাইন লিখেছেন-


আহলে কুরআন একটা ভ্রান্ত সম্প্রদায়। এরা নিজের বিবেক/আকল দিয়ে হাদিস গ্রহণ ও বর্জন করে। তাদের যুক্তি খুব সুন্দর। হাদিস কখনো কুরআনের বিপরীত হতে পারে না। অত‌এব, যে হাদিস কুরআনের বিপরীত পাওয়া যাবে সেটা সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হলেও মানা যাবে না। এই নীতিতে তারা মুতাওয়াতির হাদিস পর্যন্ত অস্বীকার করেছে। অথচ মুতাওয়ার হাদিস হুকুমের ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতের মতই শক্তিশালী। কুরআনের আয়াত যেমন সন্দেহাতীতভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তেমনি হাদিসের মুতাওয়াতির‌ও। এবং এমন হাদিস অস্বীকার করা কুফরী। যেমন, জাহান্নাম থেকে ঈমানদারকে বের করা সংক্রান্ত হাদিস। এই ব্যাপারে শত শত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এটা কল্পনাও করা যায় না যে, এত সংখ্যক সাহাবি ভুলেও এমন ভুল বর্ণনা করতে পারেন। এমন পর্যায়ের হাদিসকে হাদিসে মুতাওয়াতির বলে।

তারা এতো বিপুল সংখ্যক হাদিসকে কুরআনের বিপরীত হিসেবে পেয়েছে নিজের আকল দিয়ে। অথচ কুরআনের একটা আয়াত‌ও কোনো পাপি মুমিনকে চিরস্থায়ী জাহান্নামি বলেনি বরং এসব হাদিসের অনুকূলে কুরআনের আয়াত রয়েছে। কিন্তু তাদের বিবেক-বুদ্ধি এগুলোর অনুকূলে পড়ে না। প্রতিকূলে অবস্থান করে।’


আহলে কুরআন একটা ভ্রান্ত সম্প্রদায় উল্লেখ করে শায়খ আসলাম হোসাইন এরপর লিখেছেন-

তাদের এই কথা খুবই সত্য এবং সুন্দর যে হাদিস কুরআনের প্রতিকূলে যেতে পারে না। এটা দ্বারা সাধারণ মানুষকে তারা যুক্তি দিয়ে কাবু করে ফেলে। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে, কোনটা অনুকূলে আর কোনটা প্রতিকূলে সেটা চেনার মাপকাঠি কী? নিজের সামান্য বিবেকে না ধরলে সেটা বিপরীত হয়ে গেল? শরীয়ত কি আপনার বিবেকের মুখাপেক্ষী? গ্রাম্য ভাষায় বলে নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা

শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উসাইমিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব ও রসুলের সুন্নাহের মধ্যে অথবা উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতা ও বৈসাদৃশ্যের মিথ্যা খেয়াল করবে, এটা নিশ্চয়ই তার অপর্যাপ্ত জ্ঞান অথবা ত্রুটিপূর্ণ বুঝ কিংবা চিন্তার দুর্বলতার ফসল। সুতরাং সে যেন জ্ঞানান্বেষণ করে এবং সুস্থ চিন্তার ক্ষেত্রে মেহনত করে, যাতে তার সামনে প্রকৃত সত্য বিষয়টি উজ্জ্বল দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এরপরও যদি আসল সত্যটি তার কাছে স্পষ্ট না হয় তাহলে সে যেন এই বিষয়টি জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট সপর্দ করে এবং অহেতুক মিথ্যার জাল বুনা থেকে বিরত থাকে।’ (উসাইমিন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ১৫)

‘আহলে কুরআন একটা ভ্রান্ত সম্প্রদায়’ তারা মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে সুন্দরভাবে যুক্তি উপস্থাপন করে, সাধারণ জ্ঞান নিয়ে এসব বিভ্রান্তি ধরা সম্ভব হয় না অনেক সময়। তাই কুরআন হাদিসের উপর ভালো ধারণা না থাকলে তাদের প্রোগ্রামে যাওয়া এবং তাদের বই পড়া কারো জন্য উচিত নয়।


লেখক- শায়খ আসলাম হোসাইন,

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম