সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) বিশ্ব ইসলামী জাগরণের প্রাণ পুরুষ! তিনি পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, আক্বাইদ, সিরাত এবং আরবী ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চ সনদধারী (ডিগ্রী প্রাপ্ত) ইসলামী স্কলার।
তাঁর পিতার নাম: বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার প্রখ্যাত আইনজীবী সাইয়্যেদ আহমদ হাসান মাওদুদী (রহঃ)। মাওলানা অবিচ্ছিন্ন সনদে ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, আওলাদে রাসূল (সাঃ)। তার ৩৮তম পূর্ব পুরুষ হলেন হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর স্বামী ইসলামের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী বিন আবু তালেব (রাঃ)।
মাওলানার জন্মঃ ভারতের হায়দারাবাদ প্রদেশের আওরংগাবাদে ১৯০৩ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর মুতাবিক ১৩২১ হিজরীর ৩ রা রজব।
মাওলানার ইন্তেকালঃ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) উত্তর আমেরিকার বাফেলোতে ১৯৭৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মুতাবিক ১৩৯৯ হিজরীর ১লা জিলক্বাদ।
মাওলানার জানাজা ও দাফনঃ ২২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হারামাইন শরীফে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় । ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরের সর্ববৃহৎ গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে ১০ থেকে ১২ লক্ষ মুসাল্লীর নামাযে জানাজা আদায়। কাবার প্রধান ইমাম ও খতীব মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়েল (রহঃ) এর অংশগ্রহণ। অতঃপর লাহোরেই দাফন। তবে জানাজা পড়ান প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শাইখ ইউসুফ আল- কারযাভি (রহ.)
মাওলানার পরিবারঃ ১৯৩৭ সালের ৫ই মার্চ মাওলানা প্রসিদ্ধ এক সাইয়েদ পরিবারের বিবাহ করেন। বেগম মওদুদী (রহঃ) ও ছিলেন আওলাদে রাসূল (সঃ)। মাওলানার ৪ জন পুত্র সন্তান ও একজন মেয়ে ছিলেন। পুত্রসন্তানগন হলেন যথাক্রমে:
১) উমর ফারুক মাওদুদী
২) প্রখ্যাত ব্রেইন স্পেশালিষ্ট আমেরিকা প্রবাসী ডাঃআহমদ ফারুক মাওদুদী।
৩) মুহাম্মদ ফারুক মাওদুদী।
৪) হুসাইন ফারুক মাওদুদী।
সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) পাক ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ৭৫জন আলেম নিয়ে ১৯৪১ সালের ২৬শে আগস্ট জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি দলের আমীর নির্বাচিত হন। শারিরীক অসুস্থতার কারণে ১৯৭২ সালে তিনি আমীর পদ থেকে অব্যাহতি নেন। মিয়া তুফায়েল মুহাম্মদ পরবর্তীতে আমীর নির্বাচিত হন। মাওলানার ৪ জন সুযোগ্য পুত্রসন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি কাউকে গদীনিশীন করেন নি। পাক ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিতে তিনি এমন একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যা এখনো কোনো দলে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
মাওলানার আব্বা ও আম্মার ইন্তেকালঃ ১৯২০ সালে মাওলানার আব্বা এবং ১৯৫৭ সালে মাওলানার আম্মার ইন্তেকাল হয়।
সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) শিক্ষাজীবন :
১) মাওলানা তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর নিজ পিতা সাইয়েদ আহমদ হাসান মওদুদী (রহঃ) এর কাছে গ্রহন করেন।
২) মাওলানা ১৯১৪ সালে হায়দারাবাদ শিক্ষা বোর্ডের অধীন মৌলভী পরীক্ষা (এস.এস.সি/দাখিল) দিয়ে বোর্ডে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে বিরল কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
৩) মাওলানা ১৯১৫ ও ১৯১৬ সালে ভারতের প্রসিদ্ধ ইংরেজি ভাষাবিদ ও পন্ডিত শিক্ষক মুহাম্মদ ফাযেল (রহ) এর কাছে ইংরেজি ভাষা অধ্যয়ন করে ইংরেজিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। যার ফলে মাওলানা পাশ্চাত্য সভ্যতার গভীরে প্রবেশ করে ইসলামকে কালজয়ী আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হন।
৪) সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) ১৯১৭-১৯২০ সাল পর্যন্ত ভারতের শ্রেষ্ঠ আরবী ভাষাবিদ মাওলানা আব্দুল সালাম নিয়াযের কাছে ছরফ, নাহু ও বালাগাতের মূল্যবান কিতাবাদী পড়ে আরবী ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন।
৫) মাওলানা ১৯২১-১৯২৬ সাল পর্যন্ত দিল্লীর প্রসিদ্ধ জামেয়া, দারুল উলুম ফতেহপুর এর বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ শরীফুল্লাহ (রহঃ) এর কাছে শরহে জামী, মুখতাছার ও মিশকাত জামাতের সকল কিতাবাদী পড়ে ১৯২৬ সালের ১১ই জানুয়ারী সনদ (সার্টিফিকেট) লাভ করেন।
৬) মাওলানা ১৯২৭ সালে আরব আযমে স্বীকৃত মুহাদ্দিস মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরীর বিশেষ ছাত্র দিল্লীর দারুল উলুম ফতেহপুর জামেয়ার শায়খুল হাদিস ভারত বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা আশফাকুর রহমান কান্ধলভী (রহ) এর কাছে দাওরায়ে হাদিসে সিলেবাসভুক্ত (কামেল/টাইটেল) সকল হাদিসগ্রন্থ পড়ে ১৯২৭ সালে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
৭) সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) শায়খ আশফাকুর রহমান কান্ধলভী(রহঃ) কাছে হাদিসের অন্যান্য কিতাবাদী পড়ে-তাখাচ্ছুছ ফিল হাদিস -এর হাদিস সনদ লাভ করেন। মাওলানার এ সনদগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ছিলনা।
যারা মাওলানাকে মি: মওদুদী বলে অবজ্ঞা করেন এবং তাকে আলেম বলে স্বীকারই করেননা তারা অবশ্যই আল্লাহর আদালতে জবাবদিহি হবেন। আসলে মাওলানা উর্দু, ফার্সী, আরবী, ইংরেজী ও জার্মান ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। মাওলানাকে উর্দু ভাষার কিংবদন্তি বললেও ভুল হবেনা।
সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম যারা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) কে আলেমই মনে করেন না তাদের উদ্দেশ্যে আমার নিম্নলিখিত প্রশ্নাবলী :
১) কোন যুক্তিতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর তৎকালীন সভাপতি মাওলানা আহমদ সাঈদ (রহ) এবং মুফতী কেফায়তুল্লাহ (রহঃ), মাওলানা মওদুদী (রহঃ) কে তাদের দলীয় একমাত্র মুখপাত্র -মুসলিম-এ ৩ বছর কাল এবং পরবর্তীতে দলীয় মুখপাত্র আল জমিয়ত-এ ৫ বছরকাল (১৯২১-১৯২৮) সর্বমোট আটবছর কাল সম্পাদকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রাখেন?তারা কি জানতেন না যে মওদুদী (রহঃ) হলেন একজন মি: মওদুদী তিনি আলেম নন?
বাংলাদেশের হক্বানী ওলামাদের কাছে আমার এ প্রশ্ন?
২) তিনি আলেম না হলে ১৯ খন্ডে পুরা কুরআনের তাফসীর-তাফহীমুল কুরআন লিখলেন কিভাবে?
৩) ৫ খন্ডে রাসূল (স) এর জীবনী গ্রন্থ সিরাতে সরওয়ারে আলম-লিখলেন কিভাবে?
৪) যুগ জিজ্ঞাসার আলোকে দেড় শতাধিক বই লিখে বিশ্বে ইসলামী জাগরণ তৈরি করলেন কিভাবে?
৫) ইসলামী স্কলার হিসেবে সর্বপ্রথম বাদশাহ ফয়সাল পুরষ্কার লাভ করলেন কিভাবে?
৬) মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন কিভাবে?
৭) মক্কার রাবেতা আলামে ইসলামীর সদস্যপদ লাভ করলেন কিভাবে?
৮) সৌদি বাদশাহ খালেদ, ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমায়নী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক মাওলানার ইন্তেকালের পর শোকবানীতে তাকে বিশ্বসেরা ইসলামী স্কলার বললেন কিভাবে? (তথ্য-এয়তেরাফে আযমত)
৯) আল্লামা ড.ইকবাল কেন ওলামাদেরকে মাওলানার আল জিহাদ ফিল ইসলাম বইটি পড়ার পরামর্শ দিলেন। (তথ্য-এয়তেরাফে আযমত)
১০) হারামাইন শরীফে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) এর গায়েবানা জানাজা পড়া হলো কেন?
১১) মাওলানার জীবদ্দশায় হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী (রহ) তাকে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ বললেন কেন? (তথ্য-এয়তেরাফে আযমত)
১২) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-পাকিস্তানের সভাপতি আব্দুল্লাহ দরখাস্তী (রহঃ) ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মাহমুদ (রহ) সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) কে কুরআন ও সুন্নাহর সনদের মর্যাদা রাখেন বলে শোকবানী দিলেন কেন? (তথ্য-এয়তেরাফে আযমত পৃ-৫৫০)
১৩) দেওবন্দ মাদ্রাসার দীর্ঘকালীন মহাপরিচালক ক্বারী মুহাম্মদ তাইয়্যিব (রহ) মাওলানা মওদুদী (রহঃ) কে আধুনিক শিক্ষিতদের জন্য এক আদর্শ লিডার বললেন কেন? (তথ্য-ফিত্বরী হুকুমত পৃ-৪৮)
১৪) কাদিয়ানী সমস্যা বইটি লিখায় মৃত্যু দণ্ডাদেশ হলো কেন?
১৫) কাবা শরীফের প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়েল (রহ) সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ১০জন মাশায়েখ নিয়ে মাওলানার জানাজায় আসলেন কেন?
সারকথা হলো,
সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) শুধুমাত্র একজন মুফাসসীর, মুহাদ্দিস, ফকীহ, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক, বাগ্মী, সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ, গ্রন্থকার এবং সংগঠক নন বরং এমন এক মর্দে মুজাহিদ-মৃত্যু দণ্ডাদেশ শ্রবনেও যাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়না তিনি ইতিহাসসৃষ্ট নন বরং ইতিহাস স্রষ্টা। এক জাতি তত্ত্বের স্বপক্ষে কলম না ধরার কারনে কুফর ও গুমরাহীর ফতোয়া যার কন্ঠরোধ করতে পারেনি। ইমাম মাহদীর আগমন পর্যন্ত আমার ধারনা মাওলানা কে এ ফতোয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতেই থাকবে। তারপর এ ইসলামের বিজয় হবে একদিন, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন আমীন।
লেখক-শায়খুল হাদীস ইসহাক আল-মাদানী (হাফি.)