সাকিব আল-হাসান ক্রিকেট বিশ্বের এমন একটি নাম, যেন একাই একটি দল, বিজয় ও নেতৃত্বের একটি গল্প, সাথে আছে বিতর্ক। বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের রেকর্ড যেমন বিস্তৃত তেমনি সাকিব আর বিতর্ক যেন একই সুত্রে গাঁথা। হোক বিশ্বকাপ খেলা বা ঘরোয়া কোনো ম্যাচ, সাকিবের দলের সাথে কোনো অনিয়ম হলে কোনো ভাবেই তা মেনে তিনি পারে না সে। ক্রিকেটের আইন, নিয়ম বা শৃঙ্খলা সব বাঁধা অতিক্রম করে হলেও সে প্রতিবাদ জানাবেই। যদিও এর জন্য তাকে জরিমানা দিতে হয়েছে বহুবার। তবু সাকিব সাকিব-ই রয়ে যায়।
আম্পায়ারের সাথে সাকিবের বিতর্ক তাই নতুন কোনো দৃশ্য নয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়াল লিগে আবারও দেখা গেলো তেমনি দৃশ্য। বিপিএল টুর্নামেন্টে সাকিব আল-হাসান অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই দলের প্রতি দায়িত্বও তার অনেক বেশি। দলের সাথে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে প্রতিবাদ জানাতে সামান্য তোয়াক্কা করবে না সে। তা তার অতীত থেকে সহজেই প্রতিয়মান।
বিপিএলে ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে আর একবার দেখা গেল সাকিব বিতর্ক। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না সাকিব আল-হাসানের। তাই বলা যায়, বিতর্ক আর সাকিব যেন একই সুত্রে গাঁথা। আবারও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাকিব, সোহান আর এনামুল কে শাস্তি দিয়েছেন ম্যাচ আম্পায়ার আখতার আহমেদ।
বরিশালের সাকিব আল হাসান ও এনামুল হক বিজয় এবং রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও এ শাস্তি পেয়েছেন। বিপিএলে মঙ্গলবার দিনের ম্যাচে মাঠে নামে ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইটার্স। ওই ম্যাচটি ৬ উইকেটে জিতেছে বরিশাল ফরচুন ।
কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে স্ট্রাইক বোলার ও স্ট্রাইক ব্যাটার নিয়ে চরম বিতর্কে মাঠে ঢুকে যান আমাদের সাকিব আল-হাসান। বরাবরের মত তর্কে মেতে উঠলেন আম্পায়ারের সঙ্গে। এনামুল হক বিজয়ের আউট নিয়েও ছিল বিতর্ক। ওই বিষয় নিয়েও বেশ উত্তাপ ছড়ায়।
মূলত বিবাদটা হয় ২য় ইনিংস এর শুরুতে। বার বার স্ট্রাইক-নন স্ট্রাইক কান্ডে একটা কমেডি পাড়ায় পরিনত হয় ক্রিকেটের ওই মুহুর্তটি। চতুরঙ্গা ডি সিলভা স্ট্রাইকে, আর রংপুরের বোলার রকিবুল হাসান বোলিং প্রান্তে। কিন্তু স্ট্রাইকে বাঁহাতি চতুরঙ্গাকে দেখে রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান বোলার পাল্টে বল তুলে দেন অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের হাতে।
এ পরিবর্তন দেখে অন্য প্রান্তে থাকা বরিশালের আরেক ওপেনার এনামুল স্ট্রাইকে আসেন। তখন রংপুর আরও একবার বোলার পাল্টে ফেলে। আর ডানহাতি এনামুলের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলকে বোলিং দিতে চাচ্ছিলেন নুরুল হাসান সোহান ।
ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী আগে বোলিং প্রান্তে বোলার বল হাতে নেবেন, তারপরই ব্যাটাররা ঠিক করবেন কে স্ট্রাইকে থাকবেন, আর কে নন–স্ট্রাইকে থাকবেন। কাজেই নুরুল হাসানের বোলার পরিবর্তনে বরিশাল ওপেনাররা স্ট্রাইক বদলাতে চাইতেই পারেন। কিন্তু বারবার এমন বাধাপ্রাপ্ত হওয়াতে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন সাকিব আল-হাসান।
আমরা সাকিবকে যতই বলি বিতর্ক আর সাকিব যেন একই সুত্রে গাঁথা। একথা সাকিবের সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ ও যৌক্তিক বিতর্ক করারই এক প্রকার টাইটেল।
মঙ্গলবারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন নুরুল হাসান সোহানও। সেজন্য শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে এই ৩ জনকে । অসদাচরণের জন্য তাদের ম্যাচ ফি’র ১৫ শতাংশ করে জরিমানা করা হয়েছে।
কিন্তু সাকিব ছিলেন যৌক্তিক, সে বাঁধা না মানা প্রতিবাদী, হোক তা শৃঙ্খলার বাঁধা পেরিয়ে হলেও সে প্রতিবাদী । সাকিব আর বিতর্ক যেন একই সুত্রে গাঁথা এ টাইটেলও তার সাহসিকতার জন্য যৌক্তিক ।
লেখক- মোঃ মাহমুদ তালুকদার
শিক্ষার্থী, ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (আই.এস.টি) ডিপার্টমেন্ট: সি.এস.ই