দুর্ভিক্ষ? Famine in Bangladesh?
দুর্ভিক্ষ! শব্দের মাঝেই যেন ভয়াবহতা। এ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির নাম। সরাসরি এমন দৃশ্য না দেখলেও মাধ্যমিকে শিল্পী জয়নুল আবেদিন এর আঁকা ছবিতে এর কিছুটা উপলব্ধি টের পাওয়া যায়। এক হাহাকার চিত্র কিভাবে মানুষকে মৃত্যু কোলে ঠেলে দেয়! একবিংশ শতাব্দীর এমন উন্নয়নের দিনে আপাতত কেউ দুর্ভিক্ষের কথা না ভাবলেও বিশ্বমন্দা ও খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বার বার উচ্চারিত এ শব্দে আগাম প্রস্তুতির আহবান ও আভাস রয়েছে। সৃষ্টিকর্তার মহান ভবিষ্যত সম্পর্কে একমাত্র নিয়ন্ত্রণ তাঁরই। তবে ২০২৩ সালের আসন্ন দুর্ভিক্ষের আগাম প্রস্তুতিতে করনীয় রয়েছে সকলের।
যেকোনো বিষয়ে (হোক দুর্ভিক্ষ) আগাম সতর্ক বার্তা অনেক সময় মানুষের ভোগান্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে। কারন এতে সাধারণ জনগণের কিছুটা প্রস্তুতি ও তথা মানসিক প্রস্তুতিও মানুষ নিতে পারে। করোনা মহামারীর ভয়াবহ কবলে যখন ইউরোপ, আমেরিকার অবনতি পরিস্থিতিতেও মহান রব বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন তার ভালোবাসার চাদরে।
কারন উন্নত রাষ্ট্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে পিপি পরিহিত ৬ ফিট দূরত্ব মেইনটেইন করেও শেষ রক্ষা পাইনি যেখানে ঢাকার ফার্মগেট, গুলিস্তানের পিপীলিকার মত মানুষ বেঁচে গেলো মহান রবের মহান করুনায়। তাই অনাগত দুর্ভিক্ষের খবরে বিচলিত না হয়ে মহান রবের করুনা কামনা তথা কিছু আগাম প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে।
দুর্ভিক্ষ? Famine in Bangladesh?
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদগন বার বার আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ যা উচ্চারিত হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে। দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরনের যোগান কমে গেলে গচ্ছিত অর্থ দিয়েও মানুষ তার নিত্যপন্যের চাহিদা পূরণে সমর্থ হবে না। সাথে সাথে দেশপ্রেমী রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া এমন পরিস্থিতি উত্তরণ কোনোভাবেই সহজ হবে না।
কারণ ২০২৩ সাল হলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার বছর। এছাড়াও যেকোনো বড়ো বিপদ উত্তরণে একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সাধারণ জনগনের সম্পৃত্ততা ও সহযোগিতা। তাই বড়ো বড়ো দলগুলোর রাজনৈতিক কারণে মহাসমাবেশ করার চেয়ে উচিত হবে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টি করনে কাজ করা।
বিশ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্মাতা রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য দেশের আর্থিক মন্দাকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। তাই হীন ও দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে রাজনৈতিক সমাঝোতা দরকার। যার প্রধান স্বার্থ হবে ২০ কোটি মানুষের প্রান বাঁচানো। প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশ হওয়া উচিত ২০ কোটি জনগনকে দুর্ভিক্ষ বিষয়ে আগাম সতর্ক করা ও তাদের প্রানে বাঁচানোর জন্যে।
দুর্ভিক্ষ? Famine in Bangladesh?
দুর্ভিক্ষ থেকে কিছুটা আগাম সতর্কতার জন্য যা যা করনীয় হতে পারেঃ
১। উৎপাদন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা ও মানুষ কে উদ্বুদ্ধ করা।
২। বাংলাদেশের উর্বর মাটির এক ইঞ্চিও যেন অনাবাদী না থাকে তা নিশ্চিত করা।
৩। এ দেশের রাস্তার পাশে সিম, লাউ, কুমড়া ফলন ভালো হয়, এদিকে নজর দেয়া।
৪। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেকোনো মা মাছ নিধন না করা। সামুদ্রিক মাছ বিদেশে রপ্তানি না করে দেশের চাহিদা পূরণে মজুদ রাখা।
৫। গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করা।
৬। হাঁস, মুরগী উৎপাদনে খামার বৃদ্ধি করা।
৭। বিল্ডিং এর ছাদে চাষাবাদ ও মাছ উৎপাদনে উৎসাহ যোগান ও সে-লক্ষ্যে কাজ করা।
৮। জালানী সংকট নিরসনে সৌর শক্তিকে ব্যাপক কাজে লাগানো ও বিল্ডিং এর ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে ওই বিল্ডিং এর বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়াত্ব বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও শীতকালে ওই বিল্ডিং এর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ সম্ভব।
৯। বিদ্যুৎ উদ্পাদনে উপকুলীয় ও পাহাড়ী এলাকায় উইন্ড মিলের ব্যাপক প্রসারণ ঘটানো।
১০। আপাতত ডলার সংকট নিরসনে বিলাসী পণ্যাদি বিদেশ থেকে আমদানী না করা।
১১। ব্যাংকগুলো তার বিনিয়োগে রুরাল ডেভপলপমেন্ট কে প্রাধান্য দেয়া ও বিলাসী পণ্য বিনিয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা।
১২। এ দেশের খাল, বিল, ডোবা নালায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজে লাগানো।
১৩। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি লক্ষ্যে সকল ফসলী জমির মালিককে কৃষি উৎপাদনে বাধ্য করা ও কৃষি খাতে প্রয়োজনে ভর্তূকি প্রদান করা।
১৪। দেশের সার্বিক শান্তির লক্ষ্যে রাজনৈতিক স্থিতিবস্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সমাঝোতা করা।
১৫। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা দেশে ফিরিয়ে আনা।
সর্বোপরি আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় মহান আল্লাহ তায়া’লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। যার কুদরত-ই হলো মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবন নিয়ন্ত্রণের জন্যে যথেষ্ট।
লেখক- সাজজাদুল ইসলাম রিপন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বি.আই.ইউ) এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।